কার্শিয়াং, ৭ ডিসেম্বর (হি.স.): এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল চা শ্রমিকের ভূমিকায়! কার্শিয়াংয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি একেবারে চা শ্রমিকের ভূমিকা পালন করলেন!
দুপুরে কার্শিয়াঙের রিসর্ট থেকে বেরিয়ে পাঙ্খাবাড়ি রোডে চা বাগানের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। চা বাগানে পৌঁছে পাহাড়ি পোশাক পরে নেন তিনি। তার পর বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে নেমে পড়েন পাতা তুলতে। চা-পাতা তোলার কাজ করেন মূলত মহিলা শ্রমিকেরা। প্রথমে শ্রমিকদের কাছ থেকে মমতা শিখে নেন গাছ থেকে পাতা তোলার কায়দা। কিছু ক্ষণের মধ্যে নিজেই দিব্যি চা-পাতা তুলতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। পাতা তুলে রাখতে থাকেন মাথায় বাঁধা ঝুড়িতে। চা পাতা তুলতে তুলতে শ্রমিকরা যে গান করেন, তাও তাঁরা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনিও তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে খানিকটা গাইলেন। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মকাইবাড়ি চা বাগান সাক্ষী রইল সম্পূর্ণ অন্য এক ছবি।
এদিন বেলার দিকে বেড়াতে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান মকাইবাড়ি টি এস্টেটে। এখানকার ম্যানেজারের বাংলোয় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা বাগানে তখন কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী চা পাতা তোলা নিয়ে তাঁদের কাছে জানতে চান। নিজেও পাতা তুলতে আগ্রহী বলে জানান। পাতা তোলার পাশাপাশি, চলতে থাকে গল্পগুজবও। গল্পের ছলেই মুখ্যমন্ত্রী জেনে নেন শ্রমিকদের বাড়ির অবস্থা। চা বাগান কেমন চলছে তা জানার পাশাপাশি খুঁটিয়ে জেনে নেন তাঁদের আয়ের বিষয়টিও। তাঁরা যে জমিতে থাকেন তার পাট্টা রয়েছে কি না, চা শ্রমিকদের জনে জনে জিজ্ঞেস করে তা জেনে নেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এর পর শ্রমিকরা তাঁকে চা বাগানের ঐতিহ্যের মতো পোশাকে সাজিয়ে দেন। পাতা তোলা শেখান। মুখ্যমন্ত্রীও পিঠে ঝুড়ি নিয়ে চা পাতা তোলেন। তাঁকে ঘিরে ছিলেন শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁদের কাজ করছেন, তাতে অত্যন্ত আনন্দিত পাহাড়ি মেয়েরা।
পরে তিনি চা শ্রমিকদের বস্ত্র বিতরণ করেন। বলেন, ”ওদের থেকে চা পাতা তোলা শিখলাম। তুললামও। আমি অনেকদিন আগে কবিতা লিখেছিলাম – দুটি পাতা একটি কুঁড়ি/ তার নাম চা-সুন্দরী।” উল্লেখ্য, চা বাগান শ্রমিকদের সুবিধার্থে ‘চা-সুন্দরী’ প্রকল্প চালু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। তার কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
স্বভাবতই উৎফুল্ল মমতা বলেন, ‘‘আজ ওদের পোশাক পরে, ঝুড়ি নিয়ে আমি নিজে চা-পাতা তুললাম। চা-পাতা তোলাটা ওদের কাছ থেকে শিখলাম। এখন আমি যে কোনও চা বাগানে গিয়ে চা-পাতা তুলতে পারি। এটা আজ আমার বড় শিক্ষা হল। পাহাড়ের সঙ্গে আমাদের রক্তের বন্ধন হয়ে গেল, হৃদয়ের মেলবন্ধন রচিত হল। পাহাড় আমার নিজের বাড়ি হয়ে গেল। পাহাড় এবং সমতলের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি হল— সবাই একসঙ্গে আমরা কাজ করব। আমি কিন্তু মুখে বলি না। রক্তের সম্পর্ক তৈরি করে দেখাই। আই অ্যাম সো হ্যাপি! উই আর ওয়ান (আমি আজ খুবই খুশি। আমরা সবাই এক)।’’
ভাইপোর বিয়ে উপলক্ষে বুধবার কার্শিয়াঙে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আছেন একটি রিসর্টে। বৃহস্পতিবার কার্শিয়াঙের টাউন হলে চলছে বিয়ের অনুষ্ঠান। তার ফাঁকেই পাঙ্খাবাড়ি রোডে এই চা বাগানে সময় কাটালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

