অসম পু‌লি‌শের গু‌লি‌তে ঘায়েল রাতাবাড়ির দামছড়া ম‌ন্দি‌রে অগ্নিকাণ্ডর মূল অভিযুক্ত আনোয়ার

রাতাবাড়ি (অসম), ১৯ নভেম্বর (হি.স.) : অসম পুলিশের গুলিতে ঘায়েল, ধৃত করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রাতাবাড়ি থানাধীন দুল্লভছড়া ডেভেলপমেন্ট ব্লক এলাকার দামছড়া তিপ্রাপু‌ঞ্জিতে অবস্থিত ১৮০০ সালের শতা‌ব্দি-প্রাচীন দু‌টি ম‌ন্দি‌রে অগ্নিসংযোগের মূল অভিযুক্ত আনোয়ার আলি। বর্তমানে রামকৃষ্ণনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর ত্রিপুরার রস্যাবাড়ি এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অভিযান চালিয়ে এক গোপন আস্তানা থেকে পাকড়াও করে রাতাবাড়ি থানায় নিয়ে আসে অসম পুলিশ। এর পর রাতে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল দামছড়ায় তার আবাসে পুলিশ অভিযান চালায়। আনোয়ারের ঘরে তালাশি চালিয়ে একটি হাতে তৈরি এক নলের গাঁদা বন্দুক সহ সক্রিয় গুলি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। আগ্নেয়াস্ত্র সহ আনোয়ারকে নিয়ে ফের রাতাবাড়ি থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে দামছড়া বাগান এলাকায় এসে প্রকৃতির ডাক দিয়েছে বললে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়।

গাড়ি থেকে নেমে বাগানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর আচমকা সে প্রহরারত পুলিশের ওপর হামলা করে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন বাধ্য হয়ে পু‌লিশ পলাতক আনোয়ার আলিকে রুখতে কয়েক রাউন্ড গু‌লি চালায়। এক‌টি গু‌লি তার পে‌টে লাগলে মাটিতে পড়ে যায় সে। পুলিশ এগিয়ে রক্তাক্ত আনোয়ারকে উদ্ধার ক‌রে রামকৃষ্ণনগর হাসপাতালে নিয়ে ভ‌রতি করেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বরে রাতে করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রাতাবাড়ি থানাধীন দুল্লভছড়া ব্লক এলাকার দামছড়ায় তিপ্রাপুঞ্জিতে বিদ্যমান ১৮০০ সালের শতা‌ব্দি-প্রাচীন দুটি মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছিল অজ্ঞাতপরিচর দুষ্কৃতীরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিনই দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেতে হয় করিমগঞ্জের জেলাশাসক মৃদুল যাদব, পুলিশ সুপার পার্থপ্রতিম দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতরাজ চৌধুরীকে।

এর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় আধাসামরিক বাহিনী। ১৮০০ সালের কোনও এক শুভ দিনে উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামে এই মন্দির তৈরি করে ততে শিব-পার্বতী ও লক্ষ্মী-নারায়ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিব-পার্বতী ও লক্ষ্মী-নারায়ণ অধিষ্ঠিত প্রাচীন মন্দিরে শত শত বছর ধরে পূজা-অর্চনা করে আসছিলেন উপজাতি জনগণ। এরই মধ্যে গত ৭ নভেম্বর গভীর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে ছাই করে দেয়। মন্দিরে অধিষ্ঠিত শতাব্দি-প্রাচীন বিগ্রহগুলি পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

পরের দিন সকালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসলে উত্তেজনা ছড়ায়। মন্দিরের পাশে দুটি প্লাস্টিকের গ্যালন উদ্ধার হয়। উপজাতি হিন্দুদের ধার্মিক ভাবাবেগে আঘাত হানতে দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিতভাবে মন্দিরটি জ্বালিয়ে দেওয়ার সন্দেহ করা হয়। এর পর জেলা জুড়ে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।

রাতাবাড়ির বিধায়ক ওই ঘটনায় অগ্নিশর্মা হয়ে ডিজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করানো হয়। অসম পুলিশের ডিজিপি এ ব্যাপারে করিমগঞ্জের পুলিশ সুপারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ অবশ্য গুরুত্ব সহকারে তদন্তে নেমে সাফল্য লাভ করে। মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে ধরার আগে এ ঘটনার সঙ্গে জ‌ড়িত থাকার অভি‌যো‌গে আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের প্রদত্ত বয়ানের ওপর ভিত্তি করে মূল অভিযুক্ত আনোয়ারকে পাকড়াও করতে রাতাবাড়ি পুলিশ জাল বিছায়।

এরই মধ্যে গোপন সূত্রে রাতাবাড়ি পুলিশের কাছে খবর আসে, শনিবার (গতকাল) রা‌তে আনোয়ার আলি উত্তর ত্রিপুরার আন্তর্জাতিক সীমান্ত টপ‌কে বাংলা‌দে‌শে পা‌লি‌য়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এই খব‌র পেয়ে অভিযুক্তকে ধরতে রাতাবা‌ড়ি থানা কর্তৃপক্ষ ‌ত্রিপুরা পু‌লি‌শের সহ‌যো‌গিতা চায়। পরে উত্তর ত্রিপুরা পুলিশের সহায়তায় রস্যাবা‌ড়ি‌ এলাকা থে‌কে তা‌কে ধরে আনে রাতাবাড়ি পুলিশ।