নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ১৯ নভেম্বর : ঘূর্ণিঝড় মিধিলি তাণ্ডবের কারণে গত ১৭ নভেম্বর রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপর গাছের ডাল পড়ে বেশ কিছু জায়গায় তার ছেড়ে যায়। ৬৬ কেভি লাইন, ৩৩ কেভি , ১১ কেভি এবং এলটি লাইন সব ক্ষেত্রেই তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে মুহূর্তের মধ্যেই গোটা রাজ্যে অন্ধকার নেমে আসে। এমনটাই দপ্তর সুত্রে জানানো হয়েছে।
ঝড়ের কারণে বহু জায়গাতেই বিদ্যুৎ পরিবাহী খুঁটি হেলে গেছে। বেশ কিছু জায়গায় খুঁটি ভেঙ্গে যায় এবং ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৭ তারিখ রাতে প্রবল ঝড় বাদলের কারণে বিদ্যুৎ নিগম এবং দপ্তরের ত্রুটি সারাইকারি দল সমস্ত জায়গায় পৌঁছে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানিয়েছে দপ্তর। তবে বেশ কিছু জায়গায় ত্রুটি সারাই করে রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল করা গিয়েছে বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ দপ্তর ।
কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই রাতের বেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল করা যায়নি। পরদিন অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর সকাল থেকেই বিদ্যুৎ দপ্তরের ত্রুটি সারাইকারি দল , এই কাজে নিয়োজিত বেসরকারি এজেন্সির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে দিনভিত্তিক শ্রমিক, গাড়ি সহ আনুষাঙ্গিক সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে ত্রুটি সারাইয়ের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে ১৮ তারিখ বিকালের মধ্যেই রাজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল করে দেওয়া যায়।
নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেশ কিছু জায়গায় পরিষেবা চালু করা যায়নি ।অনেক জায়গায় লো ভোল্টেজ হয়ে যায়। এতে গ্রাহক পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। দপ্তরের ত্রুটি সারাইকারি দল ১৮ তারিখ রাতে এবং আজ অর্থাৎ রবিবার ভোর থেকে কাজ শুরু করে সকালের মধ্যেই গোটা রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল করতে সম্ভব হয়েছে।
দপ্তরের জরুরী পরিষেবার হেল্পলাইন ১৯১২ নম্বরে ১৭ তারিখ সকাল ৯ টা থেকে ১৯ তারিখ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মোট ৩০৮৬ টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৩৩টি অভিযোগের সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে দপ্তর সুত্রে জানানো হয়েছে। বাদবাকি ১৫৩ টি অভিযোগ এর ক্ষেত্রে দপ্তরের কর্মীরা প্রচেষ্টা জারি রেখেছেন, যাতে করে রাতের মধ্যেই এই ত্রুটিও সারাই করে ফেলা যায়।
জিরানিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন জিরানিয়া, মান্দাই, চম্পকনগর, খুমুলুম, এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে মিধিলি ঝড়ে। তবে ঐদিন রাতেই জিরানিয়া নগর পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যায়। পরদিন স্থানীয় শ্রমিক সহযোগে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করে ফেলেন। এখানে হাসপাতাল সহ অন্যান্য জরুরি পরিষেবা প্রথম থেকেই সচল ছিল বলে জানিয়েছে দপ্তর। এখানে বিদ্যুৎ পরিষেবায় কোন আঘাত আসেনি।
মোহনপুর বিভাগে মিধিলি ঝড়ের তাণ্ডবে বামুটিয়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং এল টি লাইন ।
বিশালগড়ে মিধিলি ঝরে ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোকুলনগর এর ৬৬ কেভি সাবস্টেশন. একইভাবে জাঙ্গালিয়া এলাকার ৩৩ কেভি সাব স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিথিলি ঝড়ে এখানকার ১৮টি এইচটি লাইনের খুঁটি, ৫১ এলটি লাইনের খুটি ভেঙ্গে পড়ে। এই এলাকার ৬৭ কিলোমিটার তার ছিড়ে যায়। ছয়টি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে বিশালগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। তবে ১৮ তারিখ বিকাল থেকেই পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করে । আজ গোটা এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানিয়েছে দপ্তর।
পাশাপাশি সারা রাজ্যেই মিধিলি ঝড়ে বিঘ্নিত বিদ্যুৎ পরিষেবা ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছে দপ্তর।