সম্প্রীতির নজির । শক্তির আরাধনা করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে ।দীপাবলির আনন্দে কয়েদিরা । পূজো পরিচালনায় শাহজাদ, মতিউর, সেলিম, তাজরা ।

করিমগঞ্জ (অসম), ১২ নভেম্বর (হি.স.) : সম্প্রীতির নজির করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে । আলোর উৎসবে মেতে উঠেছেন করিমগঞ্জ জেলা কারাগারের বন্দিরা । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে শ্যামা বন্দনা কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে কর্মচারী থেকে শুরু করে ভিন ধর্মের কয়েদি, হাজতিদের মধ্যে । চার দেওয়ালের ভিতরে শ্যামা বন্দনায় বন্দিরা । দীপাবলি আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি দুই সম্প্রদায়ের জেলবন্ধীদের নিয়ে শ্যামাবন্দনার আয়োজন করে সমাজের ভালো বার্তা দিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন অধীক্ষক মৃণ্ময় কুমার ডাউকা ।

পাঁচিল ঘেরা জীবন হলেও উৎসবে সামিল হলে হয়তো কিছুটা আনন্দে থাকা যায়। আর তাই দীপাবলির আনন্দে ব্যস্ততার অন্ত নেই জেলা কারাগারে । আলোর উৎসবের আস্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করতে জেল বন্দিরাই কারাগারকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তুলেছেন । উৎসবের দিনে আনন্দে আর খুশি থাকতে চেষ্টার কসুর করছেন না অধিক্ষক মৃণ্ময় কুমার ডাউকা । তাই রবিবার রাতে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে কারাগারের বাহিরে ।

পুজো পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ততায় জেলা কারাগারে কর্মরত সিপাহী শাহাজাদ হুসেন মজুমদার, মতিউর রহমান, আব্দুল হেলিমদের । নির্দিষ্ঠ কোন বাজেট নেই এখানে । অনেক হিতাকাঙ্খীরা দান করে থাকেন নিজের ইচ্ছায় । নগদ অর্থ ছাড়া সামগ্রী দিয়ে থাকেন অনেকে । আর এসব দায়িত্ব পুরোটাই সামলে নিয়েছেন কয়েদি সেলিম উদ্দিন, তাজ উদ্দিন, জয়নাল উদ্দিন, আবুল কাশিমরা ।

প্রথমে প্রস্তুতি সভা হয় । এরপর আয়োজন নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে । এবারে পুজো কমিটিতে মুখ্য পৃষ্ঠপোষক রয়েছেন জেলাশাসক মৃদুল যাদব, পৃষ্ঠপোষক পুলিশ সুপার পার্থ প্রতিম দাস, অতিরিক্ত জেলাশাসক ধ্রুবজ্যোতি পাঠক, সভাপতি জেল অধিক্ষক মৃণ্ময় কুমার ডাউকা, সম্পাদক হলেন কারাধ্যক্ষ সুদীপ ব্যানার্জি, কমিটিতে রয়েছেন শাহাজাদ হুসেন মজুমদার, সেলিম উদ্দিন, শৈলেন দাস, শুভাশীষ ঘোষ সহ অনেকে ।

একশো বছরের পুরনো করিমগঞ্জ জেলা কারাগার । অনেকবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে । এখন আর দুর্গাপূজার আয়োজন না হলে শক্তির আরাধনায় কোন খামতি রাখা হয়না । আর এতে বন্দিরাই মূল উদ্যোক্তা। প্রতিমা আনা, বাজার করার দায়িত্ব পালন করে থাকেন জেলকর্মীরা । জেলের ভিতরে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ তেমন একটা নেই । তাই পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা মুসলমান বন্দিরা শামিল হয়ে বাদবাকি কাজ, প্রসাদ বিতরণে সহযোগিতা করে থাকেন ।

একের ওপরের মধ্যে মিলে মিশে থাকার আর্জি জানিয়ে অধিক্ষক মৃণ্ময় কুমার ডাউকা বলেন, সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । পুজোয় পুরোপুরি স্বত্ত্বিকতা বজায় রেখে রবিবার রাতেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । রাতে পূজাচর্না শেষ হলে সকালে প্রসাদ বিতরণ করা হবে । ঘট সহ কালীপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে কারাগারের পুকুরে বলে জানান অধিক্ষক ।