ফের ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রশ্ন, মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইন লাগিয়ে দেওয়া হল রোগীকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ৫ নভেম্বর : স্বাস্থ্য কর্মীর খামখেয়ালিপনা এবং অবহেলার কারণের জন্য গোটা ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা তলানিতে যাচ্ছে। একইসাথে একের পর এক অবাঞ্চিত এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা কৈলাসহরের ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ঘটে যাচ্ছে। এইসব অবাঞ্চিত ঘটনার জন্য কৈলাসহরের সরকারি ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, জেলা হাসপাতালের এক কর্তব্যরত নার্স মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা এক রোগীকে দিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বোতল ভর্তি সেলাইন রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাউর হতেই গোটা কৈলাসহর মহকুমা জুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 উল্লেখ্য, কৈলাসহর শহরের কাজিরগাঁও এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সঞ্জয় পাল পেশায় গৃহশিক্ষক। সঞ্জয় পাল উনার ৬৫বছরের মা লক্ষীরানী পালকে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য গত পয়লা নভেম্বর কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকায় অবস্থিত ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন।

 পরের দিন দুসরা নভেম্বর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক লক্ষীরানী পালের হার্নিয়া অপারেশন করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষীরানী পাল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আগামী আরও তিন দিন থাকবেন বলে জানা যায়।

 সঞ্জয় পাল জানান যে, দুসরা নভেম্বর অপারেশনের পর সারা দিন-রাত উনার মাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছিলো। অনুরূপ ভাবে তেসরা নভেম্বর সারা দিন সেলাইন চলছিলো। তেসরা নভেম্বর বাঁধে বিপত্তি। তেসরা নভেম্বর শুক্রবার বিকেল তিনটা নাগাদ দেখতে পান উনার মার শরীরে যে সেলাইনটি চলছে সেই সেলাইনটি প্রায় শেষের পথে। সাথে সাথে হঠাৎ সঞ্জয় বাবু দেখতে পান সেলাইনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এটা দেখে সাথে সাথেই কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের জানানো পর স্বাস্থ্য কর্মীরা এসে সেলাইন পাল্টে দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইনের বোতল নিয়ে যাবার সময় সঞ্জয় বাবু মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইনের বোতলটি নিতে দেন নি এবং বোতলটি নিজের হেফাজতে রেখে দেন।

 সঞ্জয় বাবু নিজে উনার ফেইসবুক পেইজ থেকে বিষয়টি লাইভ করেন। ফেইসবুকের এই লাইভ দেখে চৌঠা নভেম্বর শনিবার কৈলাসহরের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা সঞ্জয় বাবুর সাথে দেখা করলে উনি সমস্ত ঘটনা বিস্তৃতভাবে জানান এবং এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও এই ঘটনার সাথে যুক্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নিকট। তাছাড়াও সঞ্জয় বাবু স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে ঊনকোটি জেলার স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নতিকরনেরও দাবি জানান।

এ ব্যাপারে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড: পূর্ণক্রীত দেববর্মার সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান যে, এই ঘটনার ব্যাপারে লিখিতভাবে কোনো ধরনের অভিযোগ না পেলেও সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাটি শোনে ইতিমধ্যেই উনি সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীদের এলার্ট করে দেন এবং তদন্তেরও নির্দেশ দেন। তদন্তে গাফিলতি প্রমান হলে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলেও মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট জানান। তবে উনি এও জানান যে, মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইনটির একত্রিশ অক্টোবর অব্দি মেয়াদ ছিলো। মাত্র দুই দিন বেশি হয়েছে। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পরও এক মাস সময় অব্দি ব্যবহার করা যায় এবং তাতে কোনো ধরনের অসুবিধা হয় না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় যে, জেলা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স পাপড়ি সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইন রোগীর শরীরে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ঘটনায় গোটা মহকুমায় তীব্র চাঞ্চল্য বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *