আগরতলা, ৩০ অক্টোবর : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প। বহু প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌছেছে। তাই আজ বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক পণ্যবাহী ট্রেন চলেছে। চারটি বগি নিয়ে ওই ট্রেন আজ সাড়ে বারটায় ভারত-বাংলা সীমান্তে এসে পৌছেছে। উৎসাহী বহু স্থানীয় মানুষ সীমান্তে এবং নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে দাড়িয়ে ওই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থেকেছেন। ওই ট্রেনে লোকো মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টার সহ বাংলাদেশ রেলওয়ের ছয়জন কর্মকর্তা এসেছেন।
আগামী ১ নভেম্বর সম্ভবত ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি উপস্থিতিতে আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। সকাল এগারটায় ওই অনুষ্ঠানের সূচী নির্ধারিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন হয়েছিল। কিন্তু, মাঝে সারা বিশ্বে করোনার প্রকোপের প্রভাব ওই প্রকল্পেও পড়েছে। করোনার জেরে রেল লাইন নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয়েছে।
অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল পরিষেবা শুরু হতে চলেছে। অবশ্য, আপাতত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা শুরু হতে আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। এ-বিষয়ে ওই প্রকল্পের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গুনীন চৌধুরী জানিয়েছেন, আজ পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন নিশ্চিন্তপুর এসেছে। গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ওই ট্রেন ৮.১ কিমি পথ অতিক্রম করেছে।
তাঁর কথায়, ওই প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিমি। তাতে, ভারতের অংশে ৫.৪৬ কিমি এবং বাংলাদেশের অংশে ৬.৭৮ কিমি রেলপথ রয়েছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে রওয়ানা দিলে বাংলাদেশে প্রথম গঙ্গাসাগর স্টেশন ছুবে। আজ ওই পণ্যবাহী ট্রেন পুণরায় বাংলাদেশ ফিরে যাবে।
তাঁর দাবি, আপাতত মিটার গেজে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে। ভারতের অংশে ব্রডগেজের কাজ সমাপ্ত হতে আরও ১ থেকে ২ মাস সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, এই মুহুর্তে দুই দেশের মধ্যে শুধুই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা মিটে গেলে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাবে।
এদিন তিনি জানান, আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পে ভারতের অংশে ৮৬২.৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হতে খরচ আরও কিছুটা বাড়বে। তিনি বলেন, আগামী ১ নভেম্বর ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। ওই অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রথম ট্রেন চালিয়ে আসার সুযোগ পাওয়ার জন্য নিজেকে খুবই গর্বিত বোধ করছেন লোকো মাস্টার মাহফুজুর রহমান। বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর থেকে নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে পণ্যবাহী ট্রেন চালিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য খুবই স্মরণীয় মুহুর্ত। ভারতে ট্রেন চালিয়ে আসার খুশি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঢাকা-চিটাগাং রুটে বহু ট্রেন চালিয়েছি। ২০০৪ সালে প্রথম সহকারী লোকো মাস্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছি। তারপর ২০১৪ সাথে লোকো মাস্টার পদে পদোন্নতি পেয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলের পূর্বাঞ্চল থেকে ভারতে ট্রেন চালিয়ে আসার জন্য প্রথম লোকো মাস্টার হিসেবে সুযোগ পাওয়ায় খুবই গর্বিত বোধ করছি। তাই, বাংলাদেশ রেলওয়ের সমস্ত কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে জানতে পেরেছিলাম, ভারতে পণ্যবাহী প্রথম ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বাছাই করা হয়েছে। তাঁর মতে, রেল পরিষেবা সূচনার ফলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।
এদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের চিটাগাং জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মহম্মদ মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আজ ওই পণ্যবাহী ট্রেনে লোকো মাস্টার মাহফুজুর রহমান, সহকারী লোকো মাস্টার রোকন মিয়া, গার্ড আব্দুল রহিম, এসএসএ লিয়াকত আলী এবং এসএস ফিডার রুবেল মিয়া-কে সাথে নিয়ে এসেছি। তাঁর কথায়, আগামী ১ নভেম্বর ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে, উদ্বোধনী দিনে কি ধরনের পণ্য বহন করে আনবে ট্রেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরার চাহিদার উপর ভিত্তি করে পণ্য নিয়ে আসবে ট্রেন। তবে, সে-বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন তিনি।
সাথে তিনি যোগ করেন, পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেল লাইনের ধরণে দুই দেশের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ত্রিপুরায় ব্রডগেজ রেল চলাচল করছে। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশই মিটার গেজে ট্রেন চলছে। তবে, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজের সুবিধা রয়েছে। তাই, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই ট্রেনে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা হবে, বলেন তিনি।

