মায়ের আরাধনায় ব্রতী কল্যানপুরবাসী, সেজে উঠেছে বিভিন্ন ক্লাব প্রাঙ্গন

কল্যাণপুর, ১৯ অক্টোবরঃ বছর ঘুরে আবারো শরতের হিমেল হাওয়া আর নদীর ধারে শুভ্র কাশফুলের দোলায় মর্তে দেবী দুর্গার আগমন। শুরু হলো হিন্দু বাঙালীর শ্রেষ্ঠ পার্বন শারদীয়া দূর্গোৎসব। পূজোকে ঘিরে খুশির লহর আকাশে বাতাশে সর্বত্র। বাঙালীর শ্রেষ্ঠ পার্বনকে সামনে রেখে শহরের সাথে সাথেই পাল্লা দিচ্ছে গ্রামীন এলাকায়ও। চারিদিকে তোরজোড় চলছে পূজো উদ্যোগতাদের মধ্যে শেষ তুলির টানে। খোয়াই জেলার কল্যানপুর থানা এলাকায় এবার পুজো হচ্ছে আটানব্বইটি। কথিত মিনিশহর কল্যানপুর সহ গ্রামাঞ্চলেও জোর কদমে চলছে পূজোর আয়োজনে সামিল জাতি উপজাতি অংশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। বরাবরের মতোই কল্যানপুরের বুকে বিগ বাজেটের চোখ ধাধানো তেমন পূজোর আয়োজন না থাকলেও মোটামুটি ভালো বাজেটের বেশ কিছু ক্লাব সাধারণ মানুষকে পুজো উপহার দিতে চলছে। বিগত বছরের মত ঐতিহ্যের ধারাকে অব্যাহত রেখে জাতি জনজাতির মিলন ধারাকে অম্লান রেখে এবারও কল্যাণপুরে  শারদ উৎসবের আনন্দে দল নামবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। একত্র সংঘ (কালিবাড়ি রোড) : প্রকৃতিকে ভর করেই এবার পুজোয় সামিল কল্যানপুরের বনেদি ক্লাব একত্র সংঘ।

আধুনিকতার যুগেও  রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশকে ব্যবহার করে স্থানীয় উপজাতি শিল্পীদের হাতের কারুকাজের মধ্য দিয়ে  আকর্ষণীয় পূজা মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে। কুটির শিল্প কে গুরুত্ব দিয়ে এবার এই ক্লাবের পুজো হচ্ছে। স্হানীয় নকশিরাই এডিসি ভিলেজ বাসিন্দা গোপাল দেববর্মার নেতৃত্বে ৪/৫ জনজাতি শিল্পীরা কাল্পনিক মন্দিরের আদলে বাঁশ বেতের অনন্য নিদর্শন স্থাপন করে একত্র সংঘের পূজা মন্ডপ সৃষ্টির এক নিদর্শন স্বরূপ তুলে ধরলো। গোটা আয়োজন সম্পর্কে ক্লাবের উপদেষ্টা চেয়ারম্যান সোমেন গোপ জানায় বিগত বছরের মতো এবারও ক্লাব সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিভিন্ন  সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সামাজিক সচেতনতামূলক বার্তা প্রদানের মধ্য দিয়েই  শারদ উৎসবের আয়োজন। এ বছর পুজোর বাজেট তিন লক্ষ টাকা। নবমীর দিনে পূজা মন্ডপে খোয়াই জেলার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীদের নিয়ে সংগীতানুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও ক্লাবের তরফ থেকে সোমেনবাবু জানায়। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্লাব (ঘিলাতলী) :বরাবরের মতো এবারও গোটা কল্যাণপুর ব্লক এলাকায় ব্যাপক সাড়া তৈরি করেই দশভুজার আরাধনায় মেতে উঠেছে  ঘিলাতলীর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্লাব। সাধারণ মানুষের ওপরে যাতে কোনভাবেই চাপ ততটা না পড়ে তার জন্য বিগত বছরের তুলনায় কিছুটা বাজেট কমিয়ে সার্বিকভাবে সামাজিক সচেতনতার বার্তাকে হাতিয়ার করেই এবার পুজোর আয়োজন। কাল্পনিক মন্দিরে এবছর   তেলিয়ামুড়ার প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পীর হাতে গড়া দশভূজাদেবী পূজিত হবেন। মন্ডপ তৈরি থেকে  আলোক সজ্জা সবকিছুই ক্লাবের সদস্যরা সামলেছেন। পুজোয় বস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে স্বচ্ছ ভারত অভিযান সহ নেশার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

শান্তি প্রিয় সংঘ (দক্ষিণ দূর্গাপুর) :

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই গোটা খোয়াই জেলার মধ্যে একপ্রকার আলোড়ন তৈরি করে আসছে কল্যাণপুর দক্ষিণ দুর্গাপুরের শান্তিপ্রিয় সংঘ। এবারও ক্লাব সদস্যরা সম্মিলিতভাবে নিজেরাই কাজ করে সুদীর্ঘ ৭০ ফুট উচ্চতার কাল্পনিক মন্দির তৈরি করছে। ইতিমধ্যেই মন্দিরসহ সার্বিকভাবে পূজা মন্ডপ তৈরির কাজ শেষ । পঞ্চমীর সন্ধ্যায় স্থানীয় বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরীর হাত ধরে  পূজা মন্ডপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এবছর পুজোর বাজেট ৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন প্রকারের সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা সহ সার্বিকভাবে পূজা অনুষ্ঠানকে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে। শান্তিপ্রিয় সংঘের প্রতিমা শিল্পী থেকে শুরু করে মন্ডপ সজ্জায় থাকছেন স্থানীয় শিল্পীরা।

যদিও আলোকসজ্জার দায়িত্বে আছেন  তেলিয়ামুড়ার জয়গুরু ইলেকট্রনিক্স। নেশার বিরুদ্ধে  সার্বিক সচেতনতা তৈরি করার প্রয়াস সহ সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরীর প্রয়াস এই পুজো মন্ডপ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে বলে ক্লাব কর্মকর্তাদের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।

তরুণ সংঘ (কমলনগর) :

কল্যানপুর উত্তর কমলনগর পঞ্চায়েতের গ্রামীণ এলাকায় বেশ ভালো বাজেটের পুজোর আয়োজন করেছে তরুণ সংঘ। পুজোর প্রতি দিনই বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বরাবর। 

নেতাজী ক্লাব (কল্যানপুর মোটরস্ট্যান্ড) : চার লাখ টাকার বাজেটে এই পুজোর মূল আকর্ষণ হলো দেবী দুর্গার ২১ টি রূপ প্রদর্শন। তুইসিনদ্রাই এর রাকেশ পাল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিমা তৈরী করছেন। মণ্ডপে থাকবে বাঁশের কাজ। এই পুজো কমিটির সভাপতি শুভপ্ৰিয় বর্মন এবং সম্পাদক বিপ্লব দেব। ষষ্ঠীর দিন বস্ত্র বিতরন হবে এবং পুজো উদ্বোধন করবেন বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী বলে উদ্যোক্তারা জানালেন। নবমী দিন বিতরণ করা হবে অন্ন ভোগ।

বাঘাযতীন ক্লাব (গোপালনগর) : দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে এই ক্লাব মাতৃ আরাধনায় ব্রতী হয়েছে। আশ্চর্য জনক ভাবে এদের মণ্ডপের চুড়া চন্দ্রায়ন ২ এর মতো। সাম্প্রতিক চন্দ্রায়ন ৩ এর মতো না। সাদা রং কে গুরুত্ব দিয়েই মণ্ডপ তৈরী হচ্ছে। সভাপতি কেশব পাল জানালেন মণ্ডপ তৈরী করছেন সুদীপ দাস,। প্রতিমা আসছে মোহরছড়া থেকে। লাইট এবং সাউন্ড এ থাকছেন বিমল দাস। তারা চাইছে ভি আই পি দের তো সবাই সংবর্ধনা দেয়। কিন্তু এই ক্লাবের ইচ্ছা যে সব প্রবীন কৃষকরা আমাদের অন্ন যোগায় তাদের কয়েকজন কে সংবর্ধনা 

চেতনা সংঘ (বাতেকা ) : মাত্র দুই লাখ টাকা বাজেটে কাল্পনিক কাঠ কাপড়ের মণ্ডপে দেবী দশভুজা তিন দিন পূজিতা হবেন। গেরুয়া হলুদ এর মধ্যে নীল রং এর বর্ডার দিয়ে মণ্ডপ তৈরী হচ্ছে। ক্লাব সদস্যরাই মণ্ডপ তৈরী করছেন। প্রতিমা আনা হচ্ছে মোহরছড়া থেকে। এই পুজো কমিটির সভাপতি অনন্ত দেবনাথ এবং সম্পাদক রাকেশ দেবনাথ।

এছাড়াও পুজো হচ্ছে নিষ্ঠাভরে কল্যাণপুর বাজার, বাজার কলোনী কালীবাড়ি, থানা সংলগ্ন সার্বজনীন সহ জনজাতি অধ্যায়ুসিত একরাই বাজার, অধুনিয়া, রজনীসর্দার পাড়া, দক্ষিণ ঘিলাতলী, বড় ময়দান, পশ্চিম কুঞ্জবন, বাগান বাজার, তোতাবাড়ি সহ কল্যাণপুর মোটর স্ট্যান্ড সংলগ্ন ইয়ং ব্লাড ক্লাব, ঘিলাতলীর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্লাব,  তোতাবাড়ির দেশবন্ধু ক্লাব,  ইত্যাদি বিভিন্ন পুজোগুলো নিজেদের মতো করে কল্যাণপুরে ব্যাপক সাড়া তৈরি করতে চলেছে, বলাই বাহুল্য।

এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে বিগত বছরের মত এবারও গোটা কল্যাণপুর থানা এলাকায় প্রায় শতাধিক দুর্গাপূজা আয়োজিত হতে চলেছে এবং পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে দাবী করা হয়েছে সার্বিকভাবে পরিস্থিতিকে সুশৃংখল এবং নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে প্রশাসনের তরফ থেকে সব প্রকারের ব্যবস্থা ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *