হিমন্তবিশ্ব শর্মা উত্তরপূর্বের সাংস্কৃতিক পরম্পরা বিনাশ করছেন, আইজলে বলেছেন রাহুল- ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি! ‘মিজোরামের ধর্মীয় ভিত্তি, ভাষা সবই বিজেপি-আরএসএস কর্তৃক আক্রান্ত’

আইজল, ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরম্পরা বিনাশ করছেন। আইজলে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধী।

কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে তিন দিনের সফর সূচি নিয়ে গতকাল সোমবার মিজোরামে এসেছেন। আজ আইজলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কৌশল এবং প্রচার-কর্মসূচির বিষয়ে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, শুরুতেই তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে আক্রমণ করে বলেন, হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরম্পরাগত সাংস্কৃতিক বিনাশে নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি উত্তরপূর্বের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছেন। কথার টানে রাহুল গান্ধী মিজোরামকে ধ্বংস করতে বিজেপি আঞ্চলিক দলগুলিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন।

ক্ষমতাসীন এমএনএফ জোট শরিক বিজেপি তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আঞ্চলিক দলগুলিকে অপব্যবহার করছে। এরা বন্দুকের প্রশিক্ষণ দেয়, অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা ‘আইএনডিআইএ’ (বিরোধী জোট)-র ধারণাকে ধ্বংস করার কাজ করছে, বলেন রাহুল।

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিকেন্দ্রীকরণ, অথচ বিজেপির দৃষ্টি কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করা। কেন্দ্র থেকে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়’, সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন রাহুল।

তিনি ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বলেন, ‘আপনার ধর্মীয় ভিত্তি, ভাষা সবই আরএসএস কর্তৃক আক্রান্ত। আরএসএস মনে করে দেশ এক আদর্শে শাসিত হওয়া উচিত। আর আমরা চাই মিজোরামের জনগণ সরাসরি দিল্লি থেকে শাসিত না হয়ে তাঁদের নিজ নিজ মতাদর্শ প্রকাশ করুন।’ গান্ধী বলেন, বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস সরকার চালাচ্ছে। রাজস্থানে প্রচলিত স্বাস্থ্য মডেলের মতো অন্য কয়েকটি রাজ্যেও সফল মডেল পরিচালনা করছে। তাই মিজোরামে তাঁর দল ক্ষমতায় এলে ওই সব সফল মডেল রাজ্যবাসীর জন্য চালু করা হবে, দাবি সাংসদ রাহুল গান্ধীর।

কর্ণাটক প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘কর্ণাটকে আমরা একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছি যা ওই রাজ্যের দুর্বল অংশকে সুরক্ষিত করেছে।’ তার পরই ছত্তিশগড়ে চলে যান তিনি। বলেন, ‘ছত্তিশগড়ে ১ কুইন্টাল চালের দাম ২,০০০ টাকা, যা আমি বিশ্বাস করি সমগ্র দেশের কৃষকদের জন্য সেরা মূল্য। উদ্যোগী এবং দুর্বল অংশকে সহায়তা প্রদান, ব্যাংকিং সহায়তা, প্রযুক্তিগত সহায়তা সবই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির অংশ।’

সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘মণিপুরে বিজেপি স্থানীয় দলগুলিকে ব্যবহার করে হিংসা ছড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েল নিয়ে উদ্বিগ্ন। অথচ মণিপুর প্রসঙ্গে নীরব, গত পাঁচ মাসের মধ্যে এক মিনিটের জন্যও তিনি হিংসাজর্জর মণিপুরে আসার প্রয়োজন মনে করেননি। কয়েক মাস আগে আমি মণিপুরে গিয়েছিলাম। তখন আমি যা দেখেছি তাতে হতবাক হয়ে যাই। বিজেপি মণিপুরের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ধারণাকে হত্যা করেছে। মণিপুর এখন দুটি রাজ্যে বিভক্ত। মণিপুর এর জ্বলন্ত উদাহরণ।’ রাহুল বলেন, ‘আপনারা সর্বত্র মণিপুরের মতো পরিস্থিতি দেখছেন। বিজেপি আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং দলিতদের ওপর আক্রমণ করে।’

রাহুল বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন শান্তির পথ প্রশস্তকারী মিজো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আমার বাবা তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে আমি প্রথম মিজোরামে এসেছিলাম। এর পর অবশ্য আরও কয়েকবার এসেছি, এখানকার সাংস্কৃতিক পরম্পরা, ধর্ম (খ্রিষ্টান), ভাষার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেছি।’