আগরতলা, ১৪ অক্টোবর : জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে, এই ভয়ে কাবু হয়ে আছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। শুধু তাই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি এবং আচারবিধি বদলানোর চেষ্টা হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি যুবা, মা ও বোনেদের ভবিষ্যত নষ্ট করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না, অনেকটা হুকার দিয়েই বলেন তিনি। তাই উত্তরপূর্বাঞ্চলের সমস্ত জাতিগোষ্ঠীকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়ে তাঁর দাবি, আমাদের রক্ষা অন্য কেউ নয় নিজেদেরকেই করতে হবে। শনিবার খুমুলুঙে তিপরা মথার জনসমাবেশে দাঁড়িয়ে তিপ্রাসাদের দাবির সর্মথনে আওয়াজ তুলেই থেমে থাকেননি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরপূর্বাঞ্চল নিয়ে তাঁর সমস্ত আশঙ্কা ব্যক্ত করার পাশাপাশি তা চুপচাপ মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি) নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে রয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং তিপরা মথার প্রাক্তন সুপ্রিমো এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ গোড়া থেকেই এনআরসি-র পক্ষে এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করে রেখেছেন। স্বাভাবিকভাবে, পড়শী রাজ্যে মঞ্চ পেয়ে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সমস্ত দুশ্চিন্তার দাওয়াই খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ভাষণের শুরুতেই তিনি স্পষ্ট করে দেন, তিপ্রাসাদের সাথে দেখা করার জন্য তাঁর কারোর অনুমতির প্রয়োজন নেই। কারণ, নীতি-আদর্শ, চিন্তাধারায় পার্থক্য থাকতেই পারে, তবুও বৃহত্তর স্বার্থে তিপ্রাসাদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন তিনি। তাঁর কথায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলের জনজাতি নেতারা মানুষের স্বার্থে দাবি উত্থাপন করেছেন। তাঁর সাফ কথা, পথ আলাদা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, আমাদের লক্ষ্য ও ঠিকানা এক। তাঁর মতে, দাবি আদায়ে পদ্ধতি আলাদা হতে পারে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, আমাদের সকলকে একটাই ঠিকানায় পৌছাতে হবে।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অতীতে এই পবিত্র ভূমি রক্ষায় আওয়াজ উঠেছে। এমনকি, সংস্কৃতি, বিচারধারার সাথে যুব, মা ও বোনদের ভবিষ্যত রক্ষায় আওয়াজ উঠেছে। তাতে, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিতের বিষয়টিও বাদ যায়নি। কিন্তু, আজ তার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। তাঁর সাফ কথা, আমরা কারোর বিরুদ্ধে নই। ভারতে সকলে মিলেমিশে একসাথে থাকতে চাইছি। তাই, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত নাগরিকদের উন্নতি হোক, চাইছি। কারণ, সকলের উন্নতিতেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।
এদিন তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, আমাদের জমি কেঁড়ে নেওয়া কিংবা সংস্কৃতি, বিচারধারা বদলানোর চেষ্টা হলে মেনে নেওয়া হবে না। যুবদের সাথে মা ও বোনদের ভবিষ্যৎ নষ্টের চেষ্টা হলে চুপ থাকব না। তাঁর দাবি, ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই দেশে নেতার বদলে জনগণের আওয়াজ শক্তিশালী। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে আলাদা আলাদা জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। একে অপরের সাথে সম্পর্কের মেলবন্ধন কেউই ভাঙ্গতে পারবে না। কিন্তু, সেই চেষ্টা হলে আমরা সকলে মিলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
তিনি মনে করেন, সকলের মধ্যে একতা খুবই জরুরী। একে অপরকে সহযোগিতার ভীষণ প্রয়োজন রয়েছে। তাই, তিপ্রাসাদের দাবি নিয়ে আমাদের সকলকে মিলে আওয়াজ তুলতে হবে। প্রদ্যোতকে সাথে নিয়ে সংসদে সোচ্চার হতে হবে। তবেই, ওই সমস্যার সাংবিধানিক সমাধান খুঁজে বের করা যাবে। তাঁর সাফ কথা, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের রক্ষা অন্য কেউ নয়, নিজেদেরকেই করতে হবে।

