ভারতের প্রেসিডেন্সি জি-২০ কে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ফোরাম হতে সাহায্য করেছ: অমিতাভ কান্ত

নয়াদিল্লি, ২২ সেপ্টেম্বর : সদ্য সমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে নয়াদিল্লি নেতৃবৃন্দের ঘোষণাপত্রের ভূ-রাজনৈতিক অনুচ্ছেদে ঐকমত্য অর্জনের মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে এদেশ একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতাকারী। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শেরপা অমিতাভ কান্ত বলেন, বহুপাক্ষিক ফোরামের ইতিহাসে “কোনও সংরক্ষণ, কোনও স্তর, কোনও আসন ছাড়াই ১০০ শতাংশ ঐকমত্যের দলিল পাওয়া নজিরবিহীন।”
কান্ত বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত জি-২০ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করতে ভারতীয় কূটনীতিকদের একটি দলের ২০০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “যেহেতু কোনও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেই ঐকমত্য হয়নি এবং সবগুলিতেই ভিন্নমত ছিল, সেহেতু আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রাথমিকভাবে নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল সম্পর্কে বেশ সন্দিহান ছিল”।

শেরপা বলেন, “নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে মানেসরে যে আলোচনা হয়েছিল তা অত্যন্ত নিবিড় ছিল। শুরু থেকেই আমাদের স্পষ্ট অবস্থান ছিল যে, বিভক্ত জি-২০ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও যোগ করেন যে, এই ঐক্যমত গ্রহণের আগে অনেক উত্থান-পতন দেখা গেছে, কারণ রাশিয়া এবং জি ৭ বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশের শেরপারা ঐকমত্য গড়ে তুলতে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। পরে সৌদি আরব, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, তুরস্কের শেরপারা ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের সাথে যোগ দেন।

তিনি বলেন, ‘এই সময়ে আমরা জি-২০ ও আমন্ত্রিত দেশগুলোর মতামত বিবেচনায় রেখে একাধিক খসড়া তৈরি করেছি। আমরা এনডিএলডিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাভিলাষী, সিদ্ধান্তমূলক এবং কর্মমুখী করার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল ছিলাম। শেরপা আরও বলেন, ভারতের প্রেসিডেন্সি প্রমাণ করেছে যে জি-২০ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হতে পারে, এমনকি জাতিসংঘের চেয়েও শক্তিশালী। জি-২০ দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিশ্বের জিডিপির ৮৫ শতাংশ।

অমিতাভ কান্ত আরও বলেন, জি-২০ নেতাদের ঘোষণাপত্রে নারীনেতৃত্বাধীন উন্নয়ন, মানব-কেন্দ্রিক অগ্রগতি, এলআইএফই, অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মমুখী ফলাফল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী বিশ্বদৃষ্টির দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রয়েছে। ঘোষণা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের স্বীকৃতি ভারতকে গ্লোবাল সাউথের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে স্থান দিয়েছে। শেরপা আরও জানান যে ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সিতে মোট ১১২ টি ফলাফল পাওয়া গেছে, যা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্সির সময়ের ফলাফলের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার ৫০টি এবং ২০২১ সালে ইতালিতে ৬৫টি ফলাফল পাওয়া গেলেও পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্সির ফলাফল ছিল ২০-৩০-এর মধ্যে।

ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির সাফল্য নিয়ে শেরপা আরও বলেন, ভারতের সম্মেলন যে বৈচিত্র্য উপস্থাপন করেছে তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের জি-২০ প্রেসিডেন্সি সভাকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে ছিল না। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলজুড়ে ৬০টি শহরে ২২০টিরও বেশি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রেসিডেন্সিতে সঞ্চারিত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *