পাচারের আগে এসটিএফের জালে দুর্গাপুরে ব্রাউন সুগার সহ ধৃত দুই পাচারকারী

দুর্গাপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ফের পাচারের আগে ব্রাউন সুগার এসটিএফের জালে ধরা পড়ল দুই পাচারকারী। উদ্ধার হল প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে, দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের নাম আসাবুল শেখ এবং বদরুদ্দিন শেখ। দুজনই নদীয়ার কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা। শুক্রবার রাত্রে ওই দুই যুবক ঝাড়খণ্ডের বোকারো থেকে ব্রাউন সুগার নিয়ে নদীয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। সেইমতো রাত্রে ঝাড়খন্ড থেকে দুর্গাপুরগামী একটি বাসে দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডের বাইরে নামে তারা। গোপনসুত্রে খবর পেয়ে দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হানা দেয় এসটিএফ। দুর্গাপুর ষ্টেশনে ঢোকার মুখে এসটিএফ জালে ধরা পড়ে ওই দুজন। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫৬৭ গ্রাম ব্রাউন সুগার বাজেয়াপ্ত করে। যার আনুমানিক মুল্য ১৫ লক্ষ টাকা। তারপরই এসটিএফ কোকওভেন থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় ধৃতদের। শনিবার ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ আগষ্ট অন্ডালের কাজোড়া মোড়ে এক আশ্রমে ব্রাউনসুগার সহ ফরমান আলি নামে এক পাচারকারী ধরা পড়ে। সে মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা। তার কাছ থেকে ৪৬ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয়। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর কি মাদক পাচরকারীরা করিডর হয়ে উঠেছে?
উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর অন্ডালের বহুলা পার্বতী মন্দির মোড়ে নাকা চেকিং করার সময় জামির মোমিন নামে এক মাদক পাচারকারীকে মেটরবাইক সহ আটক করে। তল্লাশি চালাতেই গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৮.০৯ গ্রাম ব্রাউন সুগার।‌ তারপর তাকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তার মোটরবাইকটি। তার কয়েকদিন আগে ৮ নভেম্বর রাত্রে হরিপুর উখড়া রোডের ডায়মন্ড মোড়ে নাকা চেকিংয়ের সময় পাচারের আগে ব্রাউন সুগার সহ দুই পাচারকারী ধরা পড়ে। ধৃত দুই মাদক পাচারকারীর নাম রাজীব সাউ ও আস্তিক বোস রানীগঞ্জের বিএন মালিয়া রোডের বাসিন্দা। তাদের কাছে ১৬.২৩ ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয়। তার আগে গত ২৭ সেপ্টম্বর লক্ষাধিক টাকার ব্রাউন সুগার সহ অন্ডালের কাজোড়া লছিপুর এলাকায় দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছে প্রায় ২৩ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার করেছে। ধৃতদের নাম, নিতীশ কুমার সাউ (গুলু) ও আকাশ ভূঁইয়া দুজনেই কাজোড়ার লছিপুর কলোনীর বাসিন্দা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে পানাগড় -মোরগ্রাম সড়কের ওপর কাঁকসার হাসপাতালমোড় সংলগ্ন আন্ডারপাশে মাদক সহ দুজন পুলিশ ও এসটিএফের জালে ধরা পড়ে। ধৃতদের সঞ্জিব ভক্ত নদিয়ার পলাশিপাড়ার বাসিন্দা, আর একজন বিধান বৈদ্য বাঁকুড়ার সোনামুখির ডিহিপাড়ার বাসিন্দা। তাদের কাছে প্রায় ৯৭০ গ্রাম হেরোইন, যার বাজার মুল্য প্রায় কোটি টাকার ওপর। এছাড়াও ১০২০ গ্রাম অ্যালপ্রাজোলাম উদ্ধার হয়েছে। এই নেশার ঔষধটি মুলত ঘুমের জন্য ব্যাবহৃত হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের গোড়াতে কাঁকসার বনকাটির ১১ মাইল এলাকা থেকে প্রশান্ত রায় নামে এক মাদক পাচারকারী ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে ২৬০ গ্রাম ব্রাউনসুগার উদ্ধার হয়। যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। তার আগে ওইবছরই গত ৫ নভেম্বর দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মনিরুল শেখ, নামে এক যুবককে প্রায় কোটি টাকার হেরোইন সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। নদিয়ার পলাশিপাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল শেখ উত্তরপ্রদেশ থেকে এই মাদক পাচারের উদেশ্য নিয়ে দূর্গাপুর স্টেশনে নেমেছিল। দুর্গাপুর ষ্টেশনে নামার পর সেখান থেকে স্টেশন বাস স্ট্যান্ডের পিছনের রাস্তা ধরে বাইরে বেরিয়ে আসছিল। ওই সময় পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে তাকে আটক করে। তার কথায় অসঙ্গতি থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তল্লাশি করতেই তার কাছ থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়। তারপরই পুলিশ মনিরুলকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে ২৮০ গ্রাম হেরোইন ও আগ্নেয়াস্ত্র সহ তিনজন সুপারিকিলার ধরা পড়ে দুর্গাপুর বেনাচিতির উত্তরপল্লী এলাকায়। তারপর এদিনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল পড়েছে শিল্পাঞ্চলজুড়ে। প্রশ্ন এখানেই, একের পর এক ঘটনায় মাদকপাচারকারীরা কি শিল্পাঞ্চলকে করিডর হিসাবে ব্যাবহার করছে? যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ” নাকা চেকিং জারি আছে। কোথায় কিভাবে ওই মাদক পেয়েছে, কোথায় পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল সেটা জানার জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *