বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে করিমগঞ্জের রাজপথে সিপিআই (এম)

করিমগঞ্জ (অসম), ৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : জেলাসদর করিমগঞ্জ শহর সহ গোটা জেলায় বিদ্যুৎ সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে চলছে দেদার পাওয়ার-কাট। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বরাক উপত্যকাকে। ভাদ্রের প্রচণ্ড দবদাহের মধ্যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতি জনজীবনের সর্বস্তরে প্রভাব ফেলছে। ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো অত্যাবশকীয় পরিষেবারগুলি ব্যাহত হচ্ছে।

এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষ এই সংকটের সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার বদলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ মাশুল বাড়াচ্ছেন, জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জেলায় প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলার বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে আজ মঙ্গলবার করিমগঞ্জের শিববাড়ি রোডে এপিডিসিএল অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটি। জেলার বিদ্যুৎ সমস্যার বিবিধ দিক বিবেচনা করে ধরনা থেকে ৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকপত্র অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ধরনাস্থলে দাঁড়িয়ে সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদক পরিতোষ দাশগুপ্ত বলেন, ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর অত্যাবশক পরিষেবা হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থা সরকারের হাতে ছিল। গরিব মানুষের গৃহ, চাষবাস ইত্যাদি কাজে ভরতুকি দিয়ে চলত বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে গরিব মানুষেরা এই পরিসেবা গ্রহণ করতে পারেন। উদার অর্থনীতির যুগে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের নজর পড়েছে। বিদ্যুৎকে লাভজনক করার জন্য একদিকে এক্ষেত্রে ব্যক্তি পূঁজিকে ডেকে আনা হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করে ঘন ঘন বিদ্যুৎ মাশুল বাড়ানো হচ্ছে।

অসম বিদ্যুৎ পর্ষদের গায়ের জোরে স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত সামগ্রিক এই পরিকল্পনারই অংশ। অবশ্যই সরকার এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগান, বিতরণ ব্যবস্থার খোলনালচে পাল্টে এখন পর্যন্ত যেটুকু সুবিধা গ্রাহকরা ভোগ করেন সেগুলিকে ছেঁটে ফেলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত খণ্ডে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই তদানীন্তন বাজপেয়ী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল। এই বিল বিদ্যুৎ কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থবিরোধী।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বার-কয়েক বিদ্যুৎ বিল সংসদে পাশ করানোর চেষ্টা চালিয়েছে। সারা দেশের বিদ্যুৎ কর্মী ও জনসাধারণের সম্মিলিত চাপে এই বিল পাশ করানো না গেলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলি অন্যভাবে এই বিলের ধারাগুলোকে কার্যকরী করছে।

সাম্প্রতিককালে অস্বাভাবিক লোডশেডিং সরকারের বিদ্যুৎ নীতিরই অঙ্গ। সরকারের নীতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির জন্য লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ক্ষতি পূরণ করতে বিদ্যুৎ মাশুল বাড়িয়ে তাদের সংকটকে জনগণের কাঁধে ঠেলছে।

অন্য বক্তা সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর দুই সদস্য তরুণ গুহ এবং কালিপদ নাথও আজ প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেছেন। আজ ৬ দফা দাবি সংবলিত এক স্মারকপত্র বিভাগীয় আধিকারিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দাবিগুলি যথাক্রমে অবিলম্বে জেলার গ্রাম-শহরগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে, জেলার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যুৎ যোগান বৃদ্ধি করতে হবে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি করা চলবে না, অবিলম্বে বর্ধিত বিদ্যুৎ মাশুল প্রত্যাহার করতে হবে, ত্রুটিপূর্ণ এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গ্রাহক অভিযোগের তদন্ত করে সমাধানে অর্থপূর্ণ ব্যাবস্থা করতে হবে, গ্রাহকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একতরফাভাবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানো চলবে না এবং বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাজ্যে বিদ্যুৎ যোগান বাড়াতে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

এদিনের বিক্ষোভ-ধরনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্থ হাজরা, মহীতোষ ভট্টাচার্য, অরুণ দত্ত, ধর্মদাস চক্রবর্তী প্রমুখ বহুজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *