“অন্তত একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক”, আর্জি আবৃত্তিকারের

কলকাতা, ১২ আগস্ট (হি. স.) : “অন্তত একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক“— স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে এই মন্তব্য করলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার মুনমুন মুখার্জি।

শনিবার তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “স্বপ্নদীপ মারা গেছে তাই এত প্রতিবাদ হচ্ছে আজ। হবে কদিন এরকম। আসলে সব র‍্যাগিং এর পরিণতি মৃত্যু হয়ত হয় না তাই সেসব নিয়ে এত কথা হয় না। নিঃশব্দে সে সব হজম করে নিয়েই বেঁচে থাকে অনেকে। নিজের কেরিয়ারের স্বপ্ন, বাবা-মায়ের স্বপ্ন, “মানুষের মত মানুষ” হয়ে ওঠার স্বপ্ন সফল করার জন্য বাকি জীবনে কিছু ক্ষত বয়ে বেড়ায় নিঃশব্দে।

সবসময় যে সিনিয়রদের মজাদার শাস্তি দিয়ে “র‍্যাগিং” শেষ হয়ে যায় এমন নয়, কিছু এমন অত্যাচারের স্মৃতি রেখে যায় যা তার সাথে হওয়ার কথা ছিল না! যারা এসব সয় তারা যখন নিজেরা একদিন কলেজে “দাদা-দিদি” হয় তাদের কেউ কেউ নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার শোধ তুলে নেয় নতুন আসা “ভাই-বোন” দের ওপরে, তাদের উত্যক্ত করে! ভাবে “এটাই তো ট্র‍্যাডিশন, একদিন আমাদের ওপরেও তো হয়েছে, আমরাও তো সহ্য করেছি। আরে, এটুকু সহ্য করতে হয় সবাইকে এই দুনিয়ায় টিকে থাকতে গেলে!” কিন্তু যারা এই ট্র‍্যাডিশনে বিশ্বাস করেনা তারা বাকি জীবনটা টিকে থাকে কলেজ জীবনের কিছু দগদগে ঘা নিয়ে।

এই র‍্যাগিং করে কারা? গ্রাম-শহর-মফস্বল থেকে উঠে আসা ওরা আমাদের ঘরেরই ছেলে যারা আমাদের নম্বর দিয়েছে হয়ত অনেক কিন্তু যাদের আমরা “মানুষ” করে উঠতে পারিনি। সে দায়ভার তাই আমাদেরও কিছুটা।

যখন কদিন পরে মিডিয়া স্বপ্নদীপের বাড়ির লোকের থেকে ফোকাস সরিয়ে যারা এই অপরাধের সাথে যুক্ত তাদের বাড়ির লোকের ইন্টারভিউ নেবে, ছেলেগুলো অনুতাপে বা ভয়ে কাঁদবে, তাদের বাবা-মা-ও আক্ষেপ করবেন, কাঁদবেন, আমরা ভাবব, সবাই ভাববে, যে গেছে সে তো গেছেই, ওরা তো আর দাগী অপরাধী নয়, এতগুলো “কৃতী” ছেলের ভবিষ্যত এখন নষ্ট করে আর কি হবে!
আর এই ভাবনা থেকেই ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়, ঘুন ধরে যায় “শিক্ষাব্যবস্থা” এর মত একটা সিস্টেম এর। গুরু পাপে লঘু দন্ড না দিয়ে এবার অন্তত একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক যা দেখে আগামী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখবে র‍্যাগিং ছোটদের একটু-আধটু শিক্ষা দেওয়ার “দাদাগিরি” -এর “ট্র‍্যাডিশন” নয়, র‍্যাগিং একটি “ক্রাইম”!
আর ছাত্র-ছাত্রীর আই কার্ড থাকলেই সে অপরাধ মুছে ফেলা যায় না, বুক ফুলিয়ে কৃতী ছাত্র-ছাত্রীর তকমা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায় না, অপরাধ করলে “অপরাধী” কে এই দেশে শাস্তি দেওয়া হয়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *