ফুটবলের প্রতি গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল দারুন আবেগিক, উৎসাহী, কোকরাঝাড়ে ডুরান্ড কাপের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন রাজনাথ

অসমের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে ছাপ ফেলেছেন : প্রতিরক্ষামন্ত্রী

কোকরাঝাড় (অসম)৫ আগস্ট (হি.স.) : ফুটবলের প্রতি গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল দারুন আবেগিক, উৎসাহী। কোকরাঝাড়ে ১৩২-তম ডুরান্ড কাপের উদ্বোধনী ভাষণে বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাশাপাশি অসমে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ১৩২-তম ডুরান্ড কাপের আয়োজন করায় তিনি বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর)-প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর প্রশংসাও করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, বিটিআর-প্রধান প্রমোদ বড়ো, সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর কল্যাণ চৌবে, কয়েকজন মন্ত্রীবিধায়ক সহ অসামরিক ও প্রতিরক্ষা আধিকারিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বহু প্রতীক্ষিত ডুরান্ড কাপের ১৩২-তম সংস্করণ অসমের কোকরাঝাড়ের কাঁঠালগুড়িতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ‘স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (সাই)-র স্টেডিয়ামে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় রাজনাথ সিং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি অনেকের কাছে শুনেছি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ফুটবলের ব্যাপারে প্রচণ্ড আবেগিক। আজ আমি আমার চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখছি, আপনারা ডুরান্ড কাপ সম্পর্কে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখিয়েছেন তাতে এই বিষয়টি আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।’ সিং বলেন, ‘আজ আমি যে দৃশ্য দেখছি, যে আবেগ দেখছি, ফুটবলের প্রতি এতটা আবেগ ভারতের খুব কম জায়গায় দেখা যায়।‘’

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করে রাজনাথ বলেন, ‘সুন্দর খেলা’কে কেবল একটি খেলা নয়, একটি আবেগ হিসাবে অভিহিত করেছেন আপনারা। সাম্প্রতিককালে অসম অনেক ফুটবল প্রতিভা তৈরি করেছে’ উল্লেখ করে রাজনাথ সিং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘ডুরান্ড কাপ যুবকদের নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে খেলাধুলায় যোগ দিতে উৎসাহিত করবে।’ রাজনাথ বলেন, ‘আমরা এমন অনেক খেলোয়াড় দেখেছি যাঁরা অসম থেকে গিয়ে জাতীয় স্তরে তাঁদের ছাপ ফেলেছেন। সে মহিলা অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক অপর্ণা নার্জারি হোন বা অস্মিতা চলিহা এবং হৃদয় হাজরিকার মতো খেলোয়াড়।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতে, খেলাধুলা নিছক একেকটি ইভেন্ট হলেও এতে আবেগ পরিণত হয় যা মানুষকে একত্রিত করে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের উদারহরণ টেনে এনেছেন। বলেন, ‘১৯৭০ সালে নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, পরিবেশ ছিল চরম উত্তেজনাময়। পুলিশ এবং রাজনীতিবিদরা কোনওভাবে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। তখন পেলে সেখানে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে যান। কিংবদন্তি পেলের একটি প্রীতি ম্যাচই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শান্তি এনে দিয়েছিল।’ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফুটবল তার শক্তি প্রদর্শন করে কীভাবে ঐক্য গড়ে তুলে সে সম্পর্কে অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণও তুলে ধরেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

খেলাধুলা এবং সমাজ, উভয় ক্ষেত্রেই নিয়ম ও দায়িত্বের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে রাজনাথ সিং সবাইকে বৃহত্তর ভালোর জন্য এগুলিকে বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবলে নিয়ম-নীতির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ফুটবলে অফসাইডের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সকলেরই জানা। কোনও খেলোয়াড় অফসাইডে গিয়ে গোল করলেও সেটিকে গোল হিসেবে গণ্য করা হয় না। যত তাড়াতাড়ি নিয়মের বিরুদ্ধে যাবেন, এমন-কি যদি আপনার কোনও প্রচেষ্টা সফল বলে মনে করেন, তা-হলে সেগুলিকে সফল বলে বিবেচনা করা হয় না। বলেন, একজন সত্যিকারের ক্রীড়াবিদ এবং একজন প্রকৃত নাগরিক, যিনি খেলা এবং সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন,’ জোর দিয়ে বলেন তিনি।

সাই-এর মাঠে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক দলগুলি দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছে। অনুষ্ঠানের পর বডোল্যান্ড এফসি এবং রাজস্থান ইউনাইটেড এফসির মধ্যে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৪ আগস্ট আটটি গ্রুপ ম্যাচ এবং একটি কোয়ার্টার ফাইনালের সাক্ষী হবে কোকরাঝাড়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন কলকাতা, গুয়াহাটি এবং কোকরাঝাড়ের তিনটি ভেন্যুতে নেপাল ও বাংলাদেশের দুটি বিদেশি দল, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি দল এবং বডোল্যান্ড এফসির স্থানীয় দল, বডোল্যান্ড এফসি, ওডিশা এফসি, রাজস্থান এফসি, শিলং লাজং এফসি, ইন্ডিয়ান আর্মি এফসি, দিল্লি এফসি, ত্রিভুবন আর্মি নেপাল এফটি, ডাউন টাউন হিরোস এফসি সহ ২৪টি দলের অংশগ্রহণের সাথে এই ইভেন্টটি বডোল্যান্ড অঞ্চলের জন্য একটি বড় মাইলফলক চিহ্নিত করবে। সমস্ত দল মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা জিততে আবেগ এবং ক্রীড়াবিদদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।