দুর্গাপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ, আক্রান্ত ৫৯ এলাকা পরিদর্শনে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব

দুর্গাপুর, ২৮ জুলাই (হি. স.) হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত। প্রশ্নের মুখে পুরসভার সাফাই কাজ। তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ দফতর। দুর্গাপুরের পলাশডিহায় ডেঙ্গু প্রভাবিত এলাকায় পরিদর্শনে এলেন পরিদর্শনে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী। পরির্দশনের পাশাপাশি ডেঙ্গু দমন নিয়ে দুর্গাপুর পুরপ্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

গত পক্ষকাল ধরে দুর্গাপুর ৩২ নং ওয়ার্ড পলাশডিহা আদিবাসী ও খাটাল পাড়ায় বেশ কয়েকজনের জ্বর উপসর্গ দেখা যায়। খবর পেয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসে। বেগতিক বুঝে এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করে। প্রথম পর্যায়ে এলাকার ১৪৯ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গেছে, যার মধ্যে ১৪ জনের নমুনায় ডেঙ্গু এনএস-ওয়ান পজেটিভ পাওয়া যায়। আক্রান্তদের মধ্যে মহিলা ও শিশু রয়েছে। বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি। কিছু বাড়ীতে চিকিৎসাধীন। নমুনা মিলতেই পরীক্ষার জন্য জমা জলে মশার লাভা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য দফতর। ঘটনার খবর চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।
তারপর থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু সংক্রামকের সংখ্যা। পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত দুর্গাপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৯ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোর তৎপরতা শুরু করে দুর্গাপুর নগরনিগম ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় নিয়মিত নিকাশী সাফাই না হওয়ায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। খাটাল পাড়ায় গবাদিপশুর মল মূত্র নিকাশীনালায় জমা হয়ে যায়। ফলে বর্জ্য জল জমা হওয়ায় মশা মাছির প্রাদুর্ভাব ঘটছে। যদিও পুরসভার পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি সাফাই কাজ শুরু করে। বাড়ি বাড়ি সম্ভাব্য বদ্ধ জলাশয় থাকা, মশা র প্রজনন ক্ষেত্র পুরোনো টায়ার, ভাঙা বালতি, ভাঙা জলের ট্যাঙ্ক সহ ভাঙাচোরা সাফাই কাজ শুরু করে। একই সঙ্গে
এলাকায় মশা দমনের জন্য কিটনাশক ছড়ানো শুরু হয়। এমনকি এলাকায় আক্রান্ত পরিবারে মশারি বিলি করা হয়। উদ্যোগ নেওয়া হয় নিকাশী নালা সহ জলাশয়ে গাপ্পি মাছ ছাড়ার।

এদিকে, প্রশ্ন উঠেছে, ডেঙ্গু দমনে পুরসভার ভুমিকায়। শিল্পশহর যখন স্মার্ট সিটির ইঁদুর দৌড়ে ব্যাস্ত, তখন শহরের বেহাল পরিষেবার চিত্রটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমান করে। বিজেপি বিধায়ক লক্ষন ঘড়ুই জানান,” ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুর্গাপুর পুরসভা সম্পুর্ন ব্যার্থ। শহরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় উদাসীন রাজ্য ও দুর্গাপুর পুরসভা।” এদিকে ডেঙ্গু প্রকোপে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার দুর্গাপুর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পলাশডিহা তে পরিদর্শনে আসেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী। এলাকায় আক্রান্ত বেশ কয়েকটি পরিবার পরিদর্শন করেন। আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারপর সেখান থেকে দুর্গাপুর পুর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও করেন। পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সেখ মহম্মদ ইউনুস জানান,” পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হয়েছে। এলাকার মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। গোটা এলাকায় মশা দমনে কিটনাশক ছড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্প। আক্রান্ত পরিবারে ব্যাবহারের জন্য মশারী দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সংক্রামক সংখ্যা কমছে। আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি আয়ত্তে চলে আসবে।”
রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী জানান,” এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুরে ডেঙ্গু এক্টিভ ৫৯ জন। আক্রান্তদের বাড়িতে চিকিৎসা চলছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। মশার সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র বাড়ীর ভাঙাচোর তোলার কাজ চলছে। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে।”