রাজ্য ছাড়ার ফতোয়া : নিরাপত্তার খোঁজে মিজোরাম ছেড়ে অসমের কাছাড়ে কাতারে কাতারে মেইতেইরা

লক্ষ্মীপুরের সাউথ বরাক কমিউনিটি হল-এ আশ্রিতদের খোঁজখবর নিলেন পুলিশ সুপার

শিলচর, ২৪ জুলাই (হি.স.) : প্রাক্তন জঙ্গিদের সংগঠন ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’ (পিএএমআরএ বা পামরা)-এর এক বিবৃতির জেরে কাতারে কাতারে মিজোরাম ছাড়ছেন মণিপুরি মেইতেইরা।মিজোরামের গৃহ দফতরের নিরাপত্তাজনিত আশ্বাস এবং খোদ ‘পামরা’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিবৃতির স্পষ্টীকরণ দেওয়ার পরও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে গতকাল রবিবার লেংপুই বিমানবন্দর থেকে এবং পায়ে হেঁটে ৮২ জন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ সীমান্তবর্তী কাছাড় জেলায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন।কাছাড়ের পুলিশ সুপার নোমাল মাহাতো জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে জেলার লক্ষ্মীপুর থানা এলাকার বিন্নাকান্দি সাউথ বরাক কমিউনিটি হল-এ আশ্রয় নিয়েছেন ছোটবড়-মহিলা সহ প্রায় ৭৯ জন মণিপুরি মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। এর আগে শনিবার রাতে ১৯ জন এবং গতকাল আরও ৪১ জন এই কমিউনিটি হল-এ এসে আশ্রয় নিয়েছেন, জানান পুলিশ সুপার।তিনি জানান, গতকাল রবিবার আরও ২২ জন এসেছেন মিজোরাম থেকে সড়ক পথে। পুলিশ সুপার মাহাতো আরও জানান, মিজোরামে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আজ আরও আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন পুলিশ সুপার।

নোমাল মাহাতো বলেন, মিজোরামে মেইতেইরা সুরক্ষিত নন, তাই তাদের রাজ্য (মিজোরাম) ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’ নামের এক প্রাক্তন জঙ্গি সংগঠন। ওই নির্দেশ সংবলিত বিবৃতি জারির পর ওই রাজ্যে বসবাসরত মেইতেইরা আতঙ্কিত। মাহাতো জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত মোট ৮২ জন মেইতেই লক্ষ্মীপুর সাউথ বরাক কমিউনিটি হল-এ এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

পুলিশ সুপার জানান, সদর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল তিনি সাউথ বরাক কমিউনিটি হল-এ গিয়ে আশ্রিত মেইতেইদের থাকা-খাওয়া ইত্যাদি নানা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মণিপুরে নগ্ন-ভিডিওকাণ্ডের পর গত ২১ জুলাই নিরাপত্তার খাতিরে মেইতেইদের মিজোরাম ছেড়ে চলে যেতে ফতোয়া জারি করেছিল ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’। ওই ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুলাই আইজলে বসবাসকারী মেইতেইদের এয়ারলিফ্ট করে প্রতিবেশী অসমের কাছাড় জেলা এবং ইমফলে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মণিপুর সরকার।এছাড়া ফতোয়াকে কেন্দ্ৰ করে উভয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে বীরেন সিং এবং জোরামথাঙ্গার মধ্যে মিজোরামে বসবাসরত মেইতেইদের নিরাপত্তা সম্পর্কে বেশ কয়েকবার ফোনে বার্তালাপ হয়েছে। ইত্যবসরে মিজোরামের গৃহ দফতরও রাজ্যের আইজল শহরে মেইতেইদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে।ইতিমধ্যে মিজোরামের গৃহবিভাগের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠকে বসেন অল মিজোরাম মণিপুরি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা। সব বৈঠকেই মিজোরামে তাঁদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন গৃহবিভাগের কমিশনার পু এইচ লালেংমাওইয়া (আইএএস)। সৰ্বশেষ বৈঠকে হোম কমিশনার অল মিজোরাম মণিপুরি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে ‘পামরা’ কর্তৃক জারিকৃত বিবৃতিটির দুর্ভাগ্যজনক ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে জানিয়ে এজন্য তাঁদের সহকর্মী মেইতেই সরকারি কর্মচারী এবং ছাত্রদের মিজোরাম ছেড়ে না যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন।এদিকে ‘পামরা’-র জারিকৃত ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বিকেলে গৃহবিভাগের কমিশনার পু এইচ লালেংমাওইয়া তাঁর সরকারি চেম্বারে ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ওই রাতেই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেইতেইদের মিজোরাম ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ সংবলিত বক্তব্যের কিছু অংশ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করেছেন, তাঁদের জারিকৃত বিবৃতিটি ছিল একটি উপদেশ বা পরামৰ্শমূলক। এতে মিজোরামে বসবাসকারী মেইতেইদের মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাতের বিষয়ে জনসাধারণের অনুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এই বিজ্ঞপ্তিতে মেইতেইদের মিজোরাম ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেছেন, মিজোরামে মণিপুরিদের নিরাপত্তা দিতে রাজ্য (মিজোরাম) সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থায় তাঁরা সন্তুষ্ট। প্রতিনিধিরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁদের বিবৃতির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাদের জারিকৃত বিবৃতিকে আর অনুসরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।কিন্তু ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর স্পষ্টীকরণকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারছেন না মিজোরামে বসবাসরত মেইতেইরা। তাই তাঁরা আগেভাগে মিজোরাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কাছাড়ে এসেছেন, বলেছেন লক্ষ্মীপুরের সাউথ বরাক কমিউনিটি হল-এর সন্ত্রস্ত আশ্রিত মেইতেইরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *