মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অসমের আটটি আদিবাসী উগ্রপন্থী সংগঠনের ১,১৮২ ক্যাডারের অস্ত্র সংবরণ

গুয়াহাটি, ৬ জুলাই (হি.স.) : অসমে শান্তি আরও মজবুত হয়েছে। সরকারের শান্তি প্রক্রিয়ায় শামিল হতে পাঁচটি আদিবাসী উগ্রপন্থী ও তিনটি বিভাজিত উগ্ৰপন্থী সংগঠনের সক্রিয় নেতা আজ বৃহস্পতিবার শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে তাদের অস্ত্রশস্ত্র সংবরণ করেছে।

আদিবাসী উগ্রপন্থীদের অস্ত্র সংবরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘আমাদের সকল অসন্তুষ্ট উপাদানকে শান্তি প্রক্রিয়ায় আনার প্রচেষ্টা ফলপ্ৰসূ হচ্ছে। কারণ আটটি আদিবাসী উগ্ৰপন্থী সংগঠন সমাজের মূল স্রোতে আসার জন্য তাদের অস্ত্রশস্ত্ৰ তুলে দিয়েছে। অসমে শান্তিকে মজবুত করে রাজ্যের অগ্রযাত্রার দিকে সবাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।’
এই অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী আজ আবারও আলফা (আই)-এর কাছে আলোচনার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অসমে যখন সমস্ত জঙ্গি গোষ্ঠী মাঠে নেমেছে, তখন আলফা (আই)-কেও রাজ্যের সমস্ত অংশের মানুষের স্বার্থে আলোচনায় আসা উচিত।’

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। তিনি বলেন, অসম সহ উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলির শান্তি ও উন্নয়নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অদম্য আগ্রহের দরুন এই অঞ্চল অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাক্ষী হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আত্মসমৰ্পণকারীদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ সহায়তার ঘোষণাও করেছেন আজ। তাঁর ঘোষণা, প্রত্যেক ক্যাডারের জন্য ৪ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, এছাড়া ক্যাডাররা তিন লক্ষ টাকা করে ঋণ নিতেও পারবেন। তিনি আরও বলেন, সরকারও টাকা দেবে। প্রত্যেক ক্যাডারকে তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য তিন বছর মাসে ৬ হাজার টাকা করে সহায়তা রাশি দেবে সরকার।
প্ৰাপ্ত টাকাগুলি যাতে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার না করেন সে ব্যাপারে আহ্বান জানিয়ে আবার হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের সশস্ত্র সংগ্রামে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অসম শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়েছে। সকল শ্রেণির মানুষ উন্নয়নের ফল ভোগ করছেন। বলেন, চা সম্প্রদায় ও আদিবাসীদের উন্নয়নে সরকার ১১৯টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছে। তাছাড়া, চা সম্প্রদায় এবং আদিবাসীদের জন্য এমবিবিএস-এ আসন সংরক্ষণের পাশাপাশি বিএসসি নার্সিং, এএনএম এবং জিএনএম কোর্সের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, চা সম্প্রদায় এবং আদিবাসীদের জন্য সরকারি চাকরিতে তিন শতাংশ সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলেন, রাজ্য সরকার আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্য রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আজকের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ১৬ সদস্যের আদিবাসী কল্যাণ ও উন্নয়ন পরিষদকে শপথ নেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অ্যাকাডেমিক ক্ষমতায়নের জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা বিবেচনা করে পরিষদকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

যে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলি তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছে তারা আদিবাসী কোব্রা মিলিটারি অব আসাম (এসিএমএ) ও ওই সংগঠনের বিভাজিত গোষ্ঠী, অল আদিবাসী ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (এএএনএলএ) ও সংগঠনের বিভাজিত গোষ্ঠী, বিরসা কমান্ডো ফোর্স (বিসিএফ) ও সংগঠনের বিভাজিত গোষ্ঠী, আদিবাসী পিপলস আর্মি (এপিএ) এবং সাঁওতাল টাইগার ফোর্স (এসটিএফ)। আটটি সংগঠন ও গোষ্ঠীর মোট ১,১৮২ জন ক্যাডার তাদের অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়েছে আজ। জমাকৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে ৩০৪টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১,৪৬০ রাউন্ড গোলাবারুদ রয়েছে।
চলতি (২০২৩) বছরের ২২ মে অসম সরকার আদিবাসী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তির ৩ নম্বর দফা অনুযায়ী ১৬ সদস্যের এক আদিবাসী কল্যাণ ও উন্নয়ন পরিষদ গঠন করে। আজ অস্ত্র সংবরণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম হাসদার নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা শপথ নেন। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান উপজাতি (সমতল) বিষয়ক, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন দফতরের সচিব বিনীতা পেগু।

আদিবাসী উগ্ৰপন্থীদের অস্ত্র সংবরণ অনুষ্ঠানে রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা, চা উপজাতি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সঞ্জয় কিষাণ, দুই সাংসদ পল্লবলোচন দাস ও কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা, বিধায়কগণ যথাক্রমে রূপজ্যোতি কুর্মি, কৃষ্ণকমল তাঁতি, রূপেশ গোয়ালা, ডিজিপি জিপি সিং, মুখ্যসচিব পবনকুমার বড়ঠাকুর, গৃহ ও রাজনৈতিক সচিব নীরজ ভার্মা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ড. মুকেশচন্দ্র সাহু, এডিজিপি হীরেন নাথ প্রমুখ।