ইমফল, ৫ জুলাই (হি.স.) : শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্র সমাজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬২ দিন পর আজ বুধবার থেকে স্কুল খুলেছে মণিপুরে। তবে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি ছিল অতি নগণ্য। রাজধানীতে শিক্ষা দফতরের জনৈক শীর্ষ আধিকারিক জানান, গোটা রাজ্যে প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার ছিল গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ।
সংঘাত-পীড়িত রাজ্যে স্কুল পুনরায় খোলার আদেশ জারি করেছে মণিপুর সরকার। অধিকাংশ স্কুল প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর আবার স্বাভাবিকভাবে ক্লাস শুরু করার নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য। তবে, সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উপস্থিতি হতাশাজনকভাবে কম। শিক্ষা দফতরের জনৈক শীর্ষ আধিকারিক জানান, আজ প্ৰথম দিন উপস্থিতির হার ছিল অতি নগণ্য, মাত্র ২০ শতাংশ। তাছাড়া রাজ্যের ৯৬টি স্কুলে শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কুল চূড়াচাঁদপুর জেলায়, ওই জেলায় ৪১টি স্কুলকে শরণার্থী শিবির করা হয়েছে। এছাড়া শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে বিষ্ণুপুরে ১৭, কাকচিঙে ১০, ৮-টি করে ইমফল পূর্ব ও কাংপোকপি, ৪-টি করে উখরুল ওটেংলউপাল এবং ২-টি করে ইমফল পশ্চিম ও থাউবাল জেলায়। তাই ওই সব স্কুলে এখনই পঠন-পাঠন শুরু করা যাবে না।
চলমান বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং সম্পূর্ণ শান্তি ফিরে না আসলেও রাজ্যের পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব বিবেচনা করে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্র সমাজ ঘন ঘন বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলিতে উপস্থিতরা নিজের নিজের অভিমত তুলে ধরে বলেন, বাড়িতে বসে বসে ছাত্ররা তাদের বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছে। তাই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ করার পাশাপাশি তাদের জীবনে স্বাভাবিকতার বোধ ফিরিয়ে আনার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ঘোষণা করেছিলেন, ৫ জুলাই (আজ) প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলগুলি আবার খুলবে। সে অনুযায়ী আজ থেকে প্রাইমারি স্কুলগুলি খোলা হয়েছে।
এদিকে ইমফলের লিটল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র লিনথোই বলে, ‘আমি খুব খুশি। দু মাস বাড়িতে কাটিয়ে আজ আমি আমার বন্ধু এবং শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে সক্ষম হয়েছি।’ সে বলে, ‘স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার জীবনকে অত্যন্ত অলস এবং বিরক্তিকর করে তুলেছিল। স্কুলে এসে আমি যা শিখি, অন্য কোথাও তা অর্জন করতে পারি না।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছে, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হলেও স্কুলগুলি প্রতিদিন কমপক্ষে কয়েক ঘণ্টা যাতে খোলা থাকে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ইমফলের ওয়াংখেই হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষিকা আরকে রঞ্জিতা দেবী শিক্ষার ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। মণিপুরে বিরাজমান অস্থিরতা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বাস করেন, স্কুলগুলি বন্ধ রাখা ছাত্রদের একাগ্রতাকে বাধাগ্রস্ত করে তাদের মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে। প্রধানশিক্ষিকা বলেন, পুনরায় খোলার প্রথম দিন আজ স্কুলে মাত্র ১০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল। তবে আগামী দিনে সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী প্রধানশিক্ষিকা আরকে রঞ্জিতা দেবী।
জনৈক উদ্বিগ্ন অভিভাবক লাইশরাম ইবোচৌবা স্কুলগুলি পুনরায় খুলতে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। তবে তাদের সন্তানদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ইবোচৌবী বিশ্বাস করেন, এই চ্যালেঞ্জিং সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা উচিত।
চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা ভবেশ শর্মা আশা করেন, ক্লাসগুলি নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। তিনিও অন্য অভিভাকদের মতো আশাবাদী, খুব শীঘ্রই রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরে আসবে।