আপডেট : উল্টো রথে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে দুই শিশু সহ ছয় জনের মর্মান্তিক মৃত্যু, আহত অন্তত ২৭, ছুটে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৮ জুন (হি. স.) : উল্টো রথে হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী রইল ত্রিপুরা। ইসকনের রথ ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে দুই শিশু সহ ছয় জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বাবা ও ছেলে রয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে ছয় জনে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সকলকে আগরতলায় জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিস্থিতি সরিজমিনে পর্যবেক্ষণে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহা রেলে চেপে ইতিমধ্যে কুমারঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। ত্রিপুরা সরকারের তরফে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় সমস্ত রকম সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, উৎসবে মাতোয়ারা ত্রিপুরাবাসী আজ এমন একটি মর্মস্পর্শী ঘটনার সাক্ষী হবেন, হয়তো কেউ কল্পনা করেননি। সকাল থেকেই সারা ত্রিপুরায় বৃষ্টি হচ্ছে। আজ ছিল প্রভু জগন্নাথের ঘরে ফেরার পালা। যথারীতি ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে উল্টো রথের আয়োজন হয়েছে। কুমারঘাটে এই প্রথম ইসকন বড় আকারে রথের আয়োজন করেছে। স্বাভাবিকভাবেই উল্টো রথে মানুষের উপচে পড়া ভীড় ছিল দেখার মতো। জানা গেছে, লোহার পাইপ দিয়ে ইসকনের রথের চূড়া বানানো হয়েছিল। তেমনি রথের চারিপাশ এবং এবং সিঁড়ি লোহার পাইপ দিয়ে বানানো ছিল। দেখতে গেলে খুবই শক্ত রথ বানিয়েছিল ইসকন। সেই রথে চেপে অনেক পুণ্যার্থী অনায়াসে যেতে পারবেন। 

আজ ঝিরঝিরে বৃষ্টি শেষে উল্টো রথ নিয়ে বের হয় ইসকন। সামনে এবং পেছনে ছিল প্রচুর শ্রদ্ধালু মানুষের ভীড়। সেই রথ ফিরে আসার সময় কুমারঘাট ব্লক চৌমুহনী এলাকায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে চলে। রথের চূড়া ওই তারে লেগে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে রথের সিঁড়িতে থাকা মানুষ বিদ্যুৎপৃষ্ট হন। মুহুর্তের মধ্যেই সেখানে আগুন ধরে যায়। তাতে, দুই শিশু সহ ছয় জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। সেখানে উপস্থিত মানুষের চিৎকারে চারিদিকে হইচই শুরু হয়ে যায়। চোখের আপনজনের আগুনে ঝলসে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মানুষ আর্তনাদে ফেঁটে পড়েন। 

খবর পেয়ে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করা হয় ঠিকই। কিন্তু তার আগেই ছয় জনের মৃত্যু এবং প্রায় ২৭ জন গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নেভাতে এগিয়ে যান। এরপর সকলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন দমকল কর্মীরা। ওই ঘটনায় সীমা পাল(৩৩), সুস্মিতা বৈশ্য(৩০), রূপক দাস(৪০), সোমা বিশ্বাস(২৮), রোহন দাস(৯), শান মালাকার(৯)-র মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রূপক দাস এবং রোহন দাস সম্পর্কে বাবা-ছেলে হন। এদিকে, আহতদের মধ্যে ৯ জনকে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে এবং ১৮ জনকে কুমারঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছয় জনকে ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল থেকে আগরতলায় জি বি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। এ-বিষয়ে ঊনকোটি বিজেপির জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর গোস্বামী জানিয়েছেন, এই প্রথম কুমারঘাটে বড় আকারে ইসকনের রথের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু, ব্লক চৌমুহনী ওই রথের যাওয়ার সূচী ছিল না। ফলে, কার নির্দেশে রথের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে তা ত্রিপুরা সরকার তদন্ত করে দেখবে বলে তিনি দাবি করেছেন। 

এই ঘটনায় বিদ্যুৎ মন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় জানিয়েছেন, কুমারঘাটে উল্টো রথ টানতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বেশ কয়েকজন পুন্যার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, এই কঠিন সময়ে ত্রিপুরা সরকার নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার এবং বিদ্যুৎ নিগম সমস্ত রকম ভাবেই আহত এবং নিহতদের পাশে থাকবে। তিনি জানান, দফতরের কাজে ত্রিপুরার বাইরে থাকায় ঘটনার খবর পেয়েই তিনি স্থানীয় বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস এবং কুমারঘাটস্থিত বিদ্যুৎ নিগমের ডিজিএমের সাথে কথা বলেছেন। কিভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো, এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ত্রিপুরা সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্যও ডিজিএমকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, আজ কুমারঘাটে উল্টোরথ টানার সময় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন পূণ্যার্থী এবং আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। পাশাপাশি, আহত‌ ব্যাক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। ত্রিপুরা সরকার এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে রয়েছে। এদিকে, পরিবহণ মন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা ওই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক এবং সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব এবং তিপরা মথার সুপ্রিমো তথা এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণও। প্রদ্যোত তিপরা মথার সকল বিধায়ক এবং এমডিসি-দের নিহত এবং আহতদের পরিবারের পাশে দাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।  

এদিকে, ঘটনার পর মন্ত্রী টিংকু রায়, ঊনকোটি জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলা হাসপাতালে ছুটে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহা ট্রেনে চেপে কুমারঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। জি বি হাসপাতালে স্থানান্তর হওয়া রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে ছুটে গেছেন বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *