কলকাতা, ২৬ জুন (হি. স.) : মাত্র ২৫ বছর বয়স হলেই রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’এর জন্য আবেদন করতে পারবেন যে কোনও মহিলা। সোমবার কোচবিহারের দক্ষিণ বিধানসভার চান্দামারিতে প্রাণনাথ হাইস্কুল প্রাঙ্গনের সভা থেকেই এমনটাই ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোচবিহার জেলাতে ৬৫ হাজার মেয়েকে রূপশ্রীর টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সরকার বার্ধক্য ভাতার টাকা পাঠানো কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা কিন্তু দিয়ে যাচ্ছি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও আমরা চালিয়ে নিয়ে যাব।’
এই প্রকল্প খাতে এখন রাজ্য সরকারের বার্ষিক খরচ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে রাজ্যের মহিলাদের হাতে নগদের জোগান নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে চালু হয়েছিল প্রকল্প। তারপর দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়। সবমিলিয়ে বর্তমানে উপভোক্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি। ৫৯ বছর পর্যন্ত বয়সী মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স হলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রাপকেরা পাবেন বার্ধক্য ভাতা। এক বাড়িতে ৪জন মহিলা থাকলে ৪জনই পাবেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন করতে। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি ও উপজাতির উপভোক্তারা প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে পান। বাকিরা পান ৫০০ টাকা করে।
উল্লেখ্য, রবিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম-২ নং ব্লকে প্রচারে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই তিনি বলেন, ৫০০ টাকা নয়, বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রতি মাসে মহিলারা পাবেন ২০০০ টাকা। এদিন মমতা তাঁর নাম না নিয়েই এই বিষয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এখন আবার বলছে ওরা ক্ষমতায় এলে নাকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৩ হাজার টাকা করে দেবে। আমি বলছি ১৫ লাখ টাকা করে তো দেবে বলেছিল। দিয়েছে? কারও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে? সব ভাঁওতাবাজি। ওদের কথায় কান দেবেন না। ওরা কোনওদিন কিছু দেয়নি। আগামিদিনেও দেবে না।’
রবিবার বিকেলে বাগডোগরায় নেমে হেলিকপ্টারে কোচবিহারে পৌঁছেছেন মমতা। সোমবার কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের চান্দামারির প্রাণনাথ হাইস্কুলের মাঠে তাঁর প্রথম নির্বাচনী সভা করলেন তিনি। মঞ্চে পাশে রাখেন বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত স্বজনহারাদের পরিবারবর্গকে। মঞ্চেই তিনি বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত স্বজনহারাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন। এদিন সভাকে ঘিরে উপচে পড়েছে মানুষের ভিড়। কোচবিহারের জনসভা শেষ করার পর তৃণমূল নেত্রী জলপাইগুড়ি জেলায় মালবাজার যাবেন বলে খবর। সেখানে মঙ্গলবার মালবাজার সংলগ্ন এলাকাতেও তিনি জনসভা করতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গজুড়ে আরও কয়েকটি সভা করার কথা রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি, মঙ্গলবার থেকে প্রচারে নামছেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নদিয়া জেলা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শুরু করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় হাঁসখালিতে জনসভা করবেন অভিষেক। এরপর দুপুর ২ টায় মুর্শিদাবাদের ডোমকলে রোড-শো রয়েছে তাঁর। নির্বাচনে আগে বর্ধমান, বীরভূম, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুরে সহ একাধিক জেলায় প্রচারে যাবেন তিনি।