পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশই বহাল, হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি, ২০ জুন (হি. স.) ‍: পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে।

আগামী ৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে প্রথম থেকেই সরব হয় বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্ব ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রক্তপাত, বোমাবাজি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই আবহে রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে তাদের। প্রথমে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিন্‌‌হা জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু তার পরই অবস্থান বদল করে কমিশন। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শনিবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কমিশন। ওই দিনই শেষ হয় ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা।

মঙ্গলবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করে, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলে সমস্যা কোথায়? মঙ্গলবার বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে এদিন বলেছে, হাইকোর্ট হয়তো ভেবেছে অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্য থেকে বাহিনী আনার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা ভাল এবং ব্যয় কেন্দ্র বহন করবে। শীর্ষ আদালত আরও মন্তব্য করে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া কখনই হিংসার লাইসেন্স হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘আপনারা পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছেন। আর হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে। খরচ তো কেন্দ্র দেবে। আপনাদের অসুবিধা কোথায়? তা ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী হলে সমস্যা কোথায়?’’ রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ট সমর্থ। পুলিশকর্মী কম থাকায় অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পরিকল্পনা বদল করতে হবে। নির্বাচনের মুখে যা সমস্যার।’’

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘নির্বাচন ঘোষণার পরের দিনই মামলা করা হয়ে গেল। তখন মনোনয়ন পর্ব চলছে। মনোনয়ন পর্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিমি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ সহযোগিতা করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে। আমাদের স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত হয়নি। আমাদের সেই কাজ চলছিল। তা ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য দেখে। এখানে কমিশনকে সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।’’