করমণ্ডল দুর্ঘটনা : সুন্দরবনের গ্রামে ফিরল তিন ভাই সহ ৫ জনের নিথর দেহ

বাসন্তী, ৪ জুন (হি. স.) শুক্রবারের সেই অভিশপ্ত রাতে উড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বাসন্তীর ছয় পরিযায়ী শ্রমিকের। এদের মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছে। রবিবার বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামে এসে পৌঁছল এদের পাঁচজনের মৃতদেহ। এঁদের মধ্যে মৃত তিন ভাই হল হারান গায়েন (৪৭), নিশিকান্ত গায়েন(৪৫) ও দিবাকর গায়েন(৪১। আর রয়েছে বিকাশ হালদার (‌২৬)‌ এবং সঞ্জয় হালদারের (‌৩৩)‌ মৃতদেহও। বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় একই গ্রামের এই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ধান রোয়ার কাজে অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিলেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। এখন ছড়ানেখালি গ্রামে স্বজনহারাদের হাহাকার মিশেছে আকাশে–বাতাসে। এই তিন সন্তানের মা শুভদ্রা গায়েন এখন স্থির হয়ে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে চোখের জল ফেলে চলেছেন। শুক্রবার সুন্দরবন এলাকায় লোডশেডিং থাকায় জানতে পারেননি তিন ছেলের মৃত্যুর খবর। আর এখন জানতে পেরে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন।

এদিকে হারান গায়েন, দিবাকর গায়েন এবং নিশিকান্ত গায়েন মারা যাওয়ায় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁদের বাড়ি বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছড়ানেখালি গ্রামে। মা, তিনজনের স্ত্রী, ছোট ছোট সন্তানদের এবার কী হবে, তা নিয়েই চিন্তায় তাঁদের পরিজনরা। বাড়িতে রোজগেরে বলতে যে আর কেউ রইল না! তাঁদের আত্মীয় সুস্মিতা বলে এক যুবতী এই খবর প্রথম পান। যখন তিনি মোবাইল ফোনে নানা খবর পড়ছিলেন। তাই অনেক রাতেই এই খবর তিনি তাঁর ঠাকুমা –কে দেন। তারপর স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলকে সাহায্য করতে আর্জি জানান। বিধায়কের তৎপরতায় দুই পরিবারের পাঁচজনের দেহ এল গ্রামে।

অন্যদিকে, বাসন্তীর এই তিন ভাই অন্ধ্রপ্রদেশে ধান কাটার কাজ করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যাওয়ার পথে যে এমন পরিণতি হবে সেটা ভাবতে পারছেন না কেউ। তাঁদের মাসতুতো ভাই বাবলু নস্কর বলেন, ‘‌শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। রাত ৯টায় সর্বনাশা খবর পাই আমরা। তারপর থেকেই সবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’‌ দেহগুলি এখন বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে। চারিদিকে শুধুই কান্নার রোল। মা শুভদ্রা এখন জ্ঞান হারিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *