(আপডিট) বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাসন্তীর ছয়জনের

বাসন্তী, ৩ জুন (হি. স.) : শুক্রবার রাতে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বাসন্তীর ছয় পরিযায়ী শ্রমিকের। এদের মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছে। সকলেই শালিমার স্টেশন থেকে শুক্রবার সকালে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে রওনা দিয়েছিলেন। মৃত তিন ভাই হল হারান গায়েন (৪৭), নিশিকান্ত গায়েন(৪৫) ও দিবাকর গায়েন(৪১)। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। বাসন্তীর উত্তর মোকামবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছড়ানেখালি গ্রামের বাসিন্দা এঁরা। একইগ্রামের বাসিন্দা বিকাশ হালদার (২৪) ও সঞ্জয় হালদারেরও(২৮) মৃত্যু হয়েছে এই ট্রেন দুর্ঘটনায়। অন্যদিকে পাশের গ্রাম আমড়াতলার বাসিন্দা সমর সর্দারের(২৩) প্রাণহানি হয়েছে দুর্ঘটনায়।

গ্রামের যুবকদের মৃত্যুর খবর আমড়াতলা গ্রামে আসতেই সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার পরিজন। হারান, নিশিকান্তদের সফরসঙ্গী তথা গ্রামের বাসিন্দা রবিন নাইয়া প্রথম দুর্ঘটনার খবর ফোনে জানায় বাড়িতে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁর পা কেটে বাদ পড়েছে বলে জানালে, অন্যদের খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়। তখনই জানা যায় এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা। রবিন ছাড়াও ভাস্কর অধিকারী নামে তাঁদের আরেক সঙ্গীও গুরুতর জখম হয়েছেন। ছয়জনের মৃত্যু ছাড়াও বাসন্তী ব্লকের অন্তত কুড়িজন গুরুতর জখম হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

এদিকে শনিবার সকালে পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হারান ও দিবাকরের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মা সুভদ্রা গায়েন বলেন, “ গ্রামে কাজ নেই। তাই সংসার চালানোর জন্য ওঁরা তিন ভাই গ্রামের কয়েকজনের সাথে অন্ধ্রপ্রদেশে রওনা দিয়েছিল। আগেও বেশ কয়েকবার গিয়েছে। কিন্তু তখন কোন বিপদ হয়নি। এবার সব শেষ হয়ে গেল।” কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন সুভদ্রা। অন্যদিকে হারানের স্ত্রী অঞ্জিতা গায়েন কার্যত এই ঘটনার কথা শুনে বোবা বনে গিয়েছেন। নিশিকান্তের স্ত্রী রেখা দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন। আর দিবাকরের স্ত্রী বৃহস্পতি ক্রমাগত প্রলাপ বকছেন। সাড়া বাড়ি জুড়েই কার্যত শোকের বাতাবরণ। গ্রামের মানুষ, আত্মীয় পরিজন ঘটনার কথা শুনে শান্তনা জানাতে আসছেন। বৃহস্পতি বলেন, “ আমি যেতে বারন করেছিলাম। বলেছিলাম এখানে যা হয় আমরা চালিয়ে নেবো। প্রয়োজনে আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাবো। কিন্তু ছেলে মেয়ের পড়াশুনা, ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজে গেল। মাস খানেকের মধ্যেই ফিরে আসবে কথা দিয়েছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা এই পরিবারের নিকট আত্মীয় হেমন্ত নস্কর বলেন, “ গ্রামে সেভাবে কাজ নেই বলে এই এলাকার বেশির ভাগ পুরুষ মানুষ, বিশেষ করে যারা যুবক তাঁরা চেন্নাই, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, কেরালা দিন মজুরির কাজে যায়। এরাও অন্ধ্রে যাচ্ছিল ধান রোয়ার কাজ করতে। আগেও বেশ কয়েকবার গিয়েছিল।”