আগরতলা, ২৬ মে (হি.স.) : ত্রিপুরার রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্য অসুস্থ। তাই, ত্রিপুরা জনজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের তিপরা মথার সদস্যদের রাজ্যপালের সাক্ষাত মিলেনি। প্রতিবাদে রাজভবনের বাইরে প্রদ্যুতের নেতৃত্বে ধর্ণায় বসলেন তিপরা মথার নির্বাচিত সদস্যরা।
ত্রিপুরায় জনজাতি অংশের মানুষের ভাবাবেগ নিয়ে রাজ্য সরকার ছিনিমিনি খেলছে। তিপরা মথার সুপ্রিমো তথা ত্রিপুরা জনজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের (টিটিএএডিসি) নির্বাচিত সদস্য প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ এমনই অভিযোগ তুলেছেন।তিনি এদিন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, টিটিএএডিসি-র অনুমোদিত বেশ কয়েকটি বিল আইনে পরিণত হওয়ার জন্য রাজ্যপালের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি পায়নি। তিনি এই দীর্ঘ বিলম্বকে একটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বলে সুর চড়িয়েছেন।
তাঁর দাবি, টিটিএএডিসি এলাকায় বসবাসকারী মানুষ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। কিছু এলাকা তীব্র জলের অভাবে মধ্যে ভুগছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলিও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে৷ শিক্ষিত যুবকরা অক্লান্তভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সন্ধান করছেন। এই সব গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাজ্যপালের কাছে পেশ করার জন্য তাঁর সাথে সাক্ষাতের আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, আক্ষেপ করে বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, টিটিএএডিসি-এর নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল জনজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সমস্যাগুলির রূপরেখা দিয়ে একটি লিখিত স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য রাজভবনে রাজ্যপালের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, অসুস্থতার কারণে রাজ্যপাল ওই প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন।
এর ফলে, তিপরা মথার বিধায়কগণ এবং জেলা পরিষদের সদস্যরা রাজ্যপালের পদক্ষেপে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ফিরে যাওয়ার আগে তাঁরা রাজ্যপালের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
এদিন শ্রী দেববর্মণ অভিযোগ করেন, রাজ্যপালের খারাপ স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তিনি কলকাতা বা দিল্লি থেকে আগতদের সাথে দেখা করেন। কিন্তু টিটিএএডিসি-এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে রাজি নন। এটি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ, ক্ষোভের সুরে বলেন তিনি।
এদিন স্মারকলিপিতে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য ঝুলে থাকা টিটিএএডিসির বিলগুলি এবং ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত তহবিল হ্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। স্মারকলিপি অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে
টিটিএএডিসি-এর মোট বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬১৯.২৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১২৬.৫৯ কোটি টাকা এখনও ত্রিপুরা সরকার প্রদান করেনি। চলতি অর্থ বছরে টিটিএএডিসি এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য মাত্র ৪.২৪ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। অতিরিক্তভাবে, পাঁচটি বিভাগের ১০টি বিল এবং বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের ১৬টি প্রথাগত আইন রাজ্যপালের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিন তিনি আরও জানিয়েছেন, চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ত্রিপুরা সরকার আমাদের দাবিগুলি অবিলম্বে সমাধান করতে ব্যর্থ হলে আমরা রাজ্য জুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করব।
সাথে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, আমাদের বিক্ষোভ কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে নিশানা করে নয়। যাঁরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাঁরা বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হবে। প্রতিটি প্রতিবাদকে সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করা একটি সাধারণ অভ্যাস। কিন্তু আমাদের অন্য কোন বিকল্প নেই।