৩২০০০ চাকরি বাতিলের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ

কলকাতা, ১৯ মে (হি.স.) : ৩২০০০ চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ততদিন এই ৩২ হাজার শিক্ষক আগের মতোই চাকরি করবেন এবং বেতন পাবেন।

২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল মোট ৪২,৫০০। এর মধ্যে শিক্ষণের ডিগ্রি বা ডিএলএড থাকা ৬৫০০ জনকে নিয়ে বরাবরই কোনও বিতর্ক ছিল না। গত শুক্রবার বাকি ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি রায়ে জানান, নতুন করে ইন্টারভিউ পাশ করলে তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন। না-হলে চাকরি খোয়াতে হবে। তার পরেই সোমবার মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩০ হাজার ১৮৫। ৩৬ হাজার নয়, টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর হয়েছে!
২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী মামলা করেন। তাঁদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি আদালতে জানান, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে প্রশিক্ষণহীন অনেকেই চাকরি পেয়েছিলেন। এই মামলাতেই উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলায় যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন,এমন ৩০জনকে তলব করে গোপন জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সোমবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা করা হয়।
চাকরিহারাদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সওয়াল করে জানান, আদালতের নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। তাদের কোনও তদন্তের রিপোর্টে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য উঠে আসেনি, যার জন্য ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিতে হবে। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেয়নি আদালত। তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই চাকরি বাতিলের এত বড় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ীই অপ্রশিক্ষিত হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে এ ক্ষেত্রে আইন ভেঙে কোনও নিয়োগ হয়নি বলে দাবি চাকরিচ্যুতদের একাংশের।

এদিন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগের মতোই চাকরি করতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় রায়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী পর্যবেক্ষণে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতোই। অর্থাৎ এই ৩২ হাজার শিক্ষক যারা ২০১৬ সালের প্যানেল প্রকাশের সময় অপ্রশিক্ষিত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিচিউড টেস্টের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।
ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে শিক্ষকরা সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন। আদালতে চাকরিহারাদের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, তাঁদের বক্তব্য না শুনেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সেকারণেই তাঁদের বক্তব্য শোনা হবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।