‘দ্য কেরালা স্টোরি’ তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি, ১৮ মে (হি. স.) : সুপ্রিম কোর্টে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষেধাজ্ঞা মামলায় স্থগিতাদেশ। বৃহস্পতিবার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির উপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাপানো নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এই নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের জেরে পশ্চিমবঙ্গে কেরালা স্টোরির প্রদর্শনীতে কোনও বাধা রইল না।অবশেষে ফের বাংলায় দেখা যাবে পরিচালক সুদীপ্ত সেনের এই ছবি।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি মুক্তির পর থেকেই তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের তৈরি এই সিনেমা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দিচ্ছে এই অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার যুক্তিও দিয়েছিলেন তিনি। তামিলনাড়ুতেও এই ছবির প্রদর্শনে বাধা আসছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ছবি নির্মাতারা। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় দ্য কেরালা স্টোরির প্রযোজক সংস্থা সানশাইন প্রোডাকশন। সেই মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার হচ্ছে দেশের শীর্ষ আদালতে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে হচ্ছে এই মামলার শুনানি হয় । ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র নির্মাতাদের হয়ে সপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ছেন সিনিয়র আইনজীবী হরিশ সালভে । অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ।

বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে সওয়ালের সময় দাবি ছবি নির্মাতাদের আইনজীবীর সওয়াল করেন, এই ছবি সিবিএফসি-র ছাড়পত্র পেয়েছে। এই ছবির বৈধ ছাড়পত্র রয়েছে। ছবির প্রদর্শন বন্ধ করলে এই ছাত্রপত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। এদিন কেরালা স্টোরির প্রদর্শনী নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হলফনামা আদালতে পাঠ করে সালভে বলেন, “মহারাষ্ট্রে একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেখানে ছবি নিষিদ্ধ হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার মহারাষ্ট্রের ঘটনা নিয়ে চিন্তিত এবং ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা করেছে।”

পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমার উদাহরণ সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরলেন ছবি নির্মাতাদের আইনজীবী। এই ছবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছিল তা আদালতে উত্থাপন করেন হরিশ সালভে। ছবি নির্মাতাদের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, কেরলের নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে কোনও দাবি করা হয়নি এই ছবিতে। তিনি আরও জানিয়েছেন, টিজারে যে ৩২ হাজার মহিলার কথা উল্লেখিত হয়েছিল তাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, “প্রথমে বলা হয়েছিল ৩২ হাজার সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে এই ছবি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কথা বলা হয়েছে তিন জনের সঙ্গে। এ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। ওটিটিতে দেখানো নিয়ে আমাদের কোনও বিরোধিতা নেই। কিন্তু পাবলিক এক্সিবিউশন বা জনসমক্ষে এই ছবির প্রদর্শন নিয়ে আপত্তি রয়েছে। মোবাইলে এটা দেখা যেতে পারে।”

এসময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, জনসমাজের ভাবাবেগের উপর মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার নির্ভর করতে পারে না। জনগণের ভাবাবেগের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আপনার যদি ভাল না লাগে, আপনি দেখবেন না।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে শুনানির সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার অসহিষ্ণু বলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছেন, “অসহিষ্ণুতা সহ্য করা যায় না! প্রকাশ্যে আবেগ প্রদর্শনের ভিত্তিতে বাক-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার নির্ধারণ করা যায় না। আবেগের প্রকাশ্য প্রদর্শন রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে দেখবেন না। বক্স অফিসের উপর ছেড়ে দিন পুরো বিষয়টা।”

প্রসংত, মে মাসের ৫ তারিখ মুক্তি পায় পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ । মুক্তির প্রথম দিন থেকেই এই ছবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ছবি মুক্তির তিন দিনের মাথায় অর্থাৎ ৮ মে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ”এই কেরালা স্টোরি, কাশ্মীর ফাইলস কিছু মানুষকে অসম্মান করার জন্যই তৈরি হয়। আমি সিপিআইএমকে সমর্থন করছি না। আমি মানুষের কথা বলছি। আমি সিপিএম পার্টির কথা বলছি না। কারণ, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে কাজ করছে। এটার সমালোচনা তো তাঁদেরই করা উচিত। কিন্তু তাঁরা তো বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আমি সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, তাঁর পার্টি বিজেপিকে সাহায্য করছে। আর সেই কারণেই কেরালা স্টোরি তৈরি হচ্ছে বিকৃত তথ্য নিয়ে।” তারপরই বাংলায় এই ছবির প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।