গুয়াহাটি ১২ মে (হি.স.) : ব্যতিক্রম মাসডো এবং বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার রবীন্দ্র সন্ধ্যার আয়োজনে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশেষভাবে আমন্ত্রিত বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শামা রহমান। বহুমুখী প্রতিভার শিল্পীদের উদ্বোধনী সঙ্গীতও নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বলন করে কবি গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার রুহুল আমিন ও তাঁর সহধর্মিণী ড° নবনীতা হক,বিশিষ্ট ছবি নির্মাতা শঙ্কর লাল গোয়েঙ্কা,রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ড° উষারঞ্জন ভট্টাচার্য,সিকিম হাউসের রেসিডেন্স কমিশনার যশোদা ছেত্রী, ব্যতিক্রম মাসডোর প্রতিষ্ঠাপক ড°সৌমেন ভারতীয়া ,যুগশঙ্খ পত্রিকার কর্ণধার বিজয় কৃষ্ণ নাথ, এস্পাইরিং লাইফের চি ই ও চৈতালী সেনগুপ্ত, এস্পাইরিং লাইফের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মনীষ জয়সওয়াল, লেখক চন্দন শর্মা, নাট্য পরিচালক মানিক আহমেদ।
এরপর ক্ষুদে শিল্পী সৌরদীপ ভারতীয়া কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, ইংরেজিতে ”প্রশ্ন” শিরোনামের একটি বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেন, যার সাথে বাংলায় ড° সুদীপা ভট্টাচার্য ছিলেন। স্বাগত ভাষণ দিতে গিয়ে ব্যতিক্রম মাসডোর প্রতিষ্ঠাপক ড°সৌমেন ভারতীয়া বলেন, “ভারত বাংলাদেশ বিশেষ করে অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মিক যোগাযোগ স্থাপন করা গত কয়েক বছর ধরেই এই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি এবং আজ শামা রহমানকে আমাদের এই রবীন্দ্র সন্ধ্যায় পেয়ে আমরা খুবই আপ্লুত এবং গর্বিত। আমরা আশাবাদী যে তাঁর এই উপস্থিতি এই দুই দেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক সম্পর্ককে আরও বেশী সুগভীর করে তুলবে।”
রুহুল আমিন বলেন, ” রবীন্দ্রনাথ আমাদের গর্ব তিনি ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। তিনি হচ্ছেন বিশ্ব বিখ্যাত এবং তাঁর মতো একজন মহীরূহকে নিয়ে আজ আমাদের এই আয়োজন। আমরা আশা করি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন এবং তাঁর মতাদর্শে যুব প্রজন্ম উজ্জীবিত হবে।”
ড° উষারঞ্জন ভট্টাচার্য নিজ বক্তব্য প্রকাশ করে বলেন, ” কখনো কবিগুরু, কখনো বিশ্বকবি আবারও কখনো গুরুদেব নামে বিশ্ববাসীর কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ হয়েছেন প্রচার হয়েছেন। ১৯৪১ সালে যখন রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হন তখন অসমেরই এক বিজ্ঞ পণ্ডিত বিখ্যাত দার্শনিক ভুবানন্দ দত্ত কলিতা আবাহন পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন ”রবীন্দ্রনাথ” এবং তিনি বলেছিলেন যে, ” রবীন্দ্রনাথের নামের সঙ্গে যেন কেউ বিশেষণ না দেয় কারণ রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বিশেষণের মধ্যে। বিশ্বের যত বিশেষণ আছে কোনো বিশেষণ দিয়েই রবীন্দ্রনাথের মতো বিশাল শক্তিকে আমরা বেঁধে রাখতে পারিনা তিনি সর্বত্রে ছড়িয়ে আছেন।” সাংসদ ভুবনেশ্বর কলিতা সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন,”অসম বাংলাদেশের মধ্যে সু-সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যে করে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রসংশনীয়।”
অনুষ্ঠানে সূর্য লাহিড়ীর রচিত এবং ভিকি পাবলিশার্সের দ্বারা প্রকাশিত ”স্বপ্নে দেখেতে” বইটির উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে কবিগুরুরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণে শব্দঘরের পারমিতা দে নাগের উদ্যোগে শব্দঘরের শিল্পীরা কবিতা ও রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বহুমুখী প্রতিভার শিল্পীরা ডেস্টিনেশন,নৃত্য মন্দির এর শিল্পীরাও সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে এবং সঙ্গীত শিল্পী ড° জয়শ্রী দেবী রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের গুণমুগ্ধ করেন। গোটা অনুষ্ঠানটি সঙ্গীত ও নৃত্যের ছন্দে মেতে ওঠেছিল। মঞ্চে শামা রহমান কখনো ”ভালোবেসে সখি নৃভীতো যতনে”, আবার কখনো ”ও যে মানে না মানা” একেরপর এক রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী গীত গেয়ে দর্শকদের আপ্লুত করেন। তাঁর গানে নৃত্য পরিবেশন করেন নিবেদিতা তরফদার।
শামা রহমানের গানের জন্য মানুষ প্রতীক্ষিত ছিল তাই প্রিয় শিল্পীকে কাছে পেয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা জানান ব্যতিক্রম মাসডোর সভাপতি ড° সৌমেন ভারতীয়া ,বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার রুহুল আমিন ও তাঁর সহধর্মিণী ড° নবনীতা হক, নিনাদ, এস্পাইরিং লাইফ, মানিক আহমেদ শব্দঘর বহুমুখী প্রতিভার শিল্পীরা। শামার মন্ত্রমুগ্ধ গানে মুগ্ধ দর্শক,এক আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি অন্ত পরে।

