গুয়াহাটি, ১১ মে (হি.স.) : ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ মোটেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়। এটি সন্ত্ৰাসবাদীদের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি একটি সজাগতা-সমৃদ্ধ একটি চলচ্চিত্র। এই ছবি সব্বাইকে তাঁদের কন্যা-সন্তানদের নিয়ে অবশ্যই দেখা উচিত। আজ বৃহস্পতিবার মাল্টিপ্লেক্স পিভিআর (সিনেমা হল) থেকে বেরিয়ে বলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
আজ তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্য এবং বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে কেন্দ্ৰ করে ছবি নির্মাণের জন্য নির্মাতা এবং প্রযোজকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। সিনেমাটি দেখে বাইরে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ফিল্মে গৃহীত ইস্যু এবং সমকালীন বিতর্ক সম্পর্কে বলেন, ছবিটি কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।
মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ থেকে বহু বিষয় জানা যাবে। কী করে আমরা নিজস্ব পরম্পরা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে শৈশব থেকে সম্পৃক্ত বা সংস্কারিত হয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায় সে সম্পর্কে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আমাদের উঠতি মেয়েরা কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, বন্ধুত্বের পাশে বন্দি হচ্ছে, কিছুটা হলেও সংশ্লিষ্ট পরিবার নজর রাখতে পারে।
ড. শৰ্মা বলেন, কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ (আইএসআইএস) কীভাবে অল্পবয়সি মেয়েদের বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগদান করতে বোকা বানিয়ে তাদের সর্বনাশ করছে তার মুখোশ খোলার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা-প্রযোজক। এই মুভিতে একটি নতুন ধরনের বিষাক্ত সন্ত্রাস দেখানো হয়েছে যা বিনা অস্ত্রে সমাজকে ধ্বংস করার এক ষড়যন্ত্র। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনও রাষ্ট্র বা ধর্ম জড়িত নয়।
কেউ কেউ এই মুভির সঙ্গে মুসলমানদের গুলিয়ে মানুষকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে তাঁর বক্তব্য, কেউ কেউ শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের দোহাই দিয়ে ছবিটিকে নিষিদ্ধ করেছেন। এঁরা নিশ্চিত জানেন, এই ছবির সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই, এটি শুধুমাত্র আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদের নীরব বীজ বপণের আসল ষড়যন্ত্র। সব জেনেও ন্যস্তস্বার্থ পূরণের জন্য ছবিটিকে নিষিদ্ধ করেছেন তাঁরা। সিনেমাটি নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়, বলেন ড. শর্মা।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রটি বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ এবং জিহাদের নামে, ধর্মের নামে সন্ত্রাসী শিবিরের ভিতরে কী চলছে তা দেখিয়ে দিয়েছে। বলেন, ধর্ম নির্বিশেষে কেরালার জনগণকে সন্ত্রাসী এই সংগঠন নিষ্পাপ মেয়েদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। বিশ্বব্যাপী কিছু অংশ কেরালার নিরপরাধ মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। অসমে কোনও মেয়ে সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়নি। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যেখানে ওই ধরনের সংগঠনে মেয়েদের যোগদান করতে প্ররোচিত করা হয়েছে। নানাভাবে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ম পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এজন্যই তিনি অসম সহ ভারতের জনগণকে তাঁদের মেয়ে সন্তানের সঙ্গে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখতে আবেদন জানান।
এই ছবিকে অসম সরকার ট্যাক্স ফ্রি করে দেবে কিনা জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, যে বা যাঁরা সিনেমাটি দেখতে চান তাঁরা দেখতে পারেন, ট্যাক্স কোনও ফ্যাক্টর নয়। কেউ একে ট্যাক্স ফ্রি করেছে কি না, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া ঠিক নয়। আমাদের উচিত, এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সবাই এসে সিনেমাটি দেখতে পারে।