আগরতলা, ১১ মে (হি. স.) : চরম নারকীয় ঘটনার সাক্ষী রইল শহর আগরতলা। পূর্ব পরিচিতির সুযোগে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতির দাবি, তাঁর সাথে অমানবিক অত্যাচার হয়েছে। কারণ, হাসপাতালে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি শিউরে উঠছিলেন। ঠিকভাবে কথা বলতে পারছিলেন না। অনেক কষ্টে মূল অভিযুক্ত গৌতম শর্মার নাম মুখে আনতে পেরেছেন তিনি। পুলিশ ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পুলিশ রিমান্ড চেয়ে পাঠিয়েছে। আরও একজনকে আটক করেছে।
সদর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আশীষ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, নির্যাতিতার পরিবারের তরফে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩৭৬ ধারায় মামলা রুজু করেছিল। আজ আদালতে ৩৭৬ডি এবং ৩২৮ ধারা অতিরিক্ত যুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছে। সাথে ধৃতের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত পুলিশের ওই আবেদন মঞ্জুর করেছে। এদিকে, ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাথে অভিযুক্তের বাড়ি থেকে নগদ ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত সোমবার কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হন ওই নির্যাতিতা ছাত্রী। তাঁকে রাত ১২টা নাগাদ আমতলী বাইপাস এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, কলেজ থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি ফিরে না আসায় সকলে মিলে তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কোথাও খুঁজে না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু, পুলিশ আমাদের অপেক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। শেষে রাত প্রায় ১২টা নাগাদ আমতলী বাইপাস এলাকায় তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই তাঁকে জি বি হাসপাতালে ভর্তি করেছি, বলেন তিনি। সাথে তিনি বলেন, মেয়েকে দেখে তাঁকে বাঁচানো যাবে বলে মনে হচ্ছিল না। কারণ, কাউকেই চিনতে পারছিল না। ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছিল না। এদিকে, নির্যাতিতা ছাত্রী মূল অভিযুক্তকে পূর্ব পরিচিত বলে বয়ান দিয়েছে। তাঁর দিদির সাথে পরিচয়ের সুত্রে তাঁদের মধ্যে পরিচিতি বলে তিনি জানিয়েছেন।
সদর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আশীষ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, সোমবার গভীর রাতে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করার পর মঙ্গলবার ভোরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জি বি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বুধবার বিকেলে নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে আমতলী থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাতে, অভিযুক্ত গৌতম শর্মার(২৪) নাম উল্লেখ করেছে নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মহেশখলা এলাকা থেকে গৌতম শর্মা-কে গতকাল রাতেই গ্রেফতার করেছে। আজ তাকে পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, ওই মামলায় ভারতীয় ফৌজদারি দন্ডবিধি ৩৭৬ডি এবং ৩২৮ ধারা অতিরিক্ত যুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনার সাথে যুক্ত সন্দেহে আরও এক যুবককে মহেশখলা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।
তিনি জানান, আদালত অভিযুক্তের পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত দুইটি ধারা যুক্ত করার অনুমতি দিয়েছে। তাঁর দাবি, ওই ঘটনার সাথে যুক্ত সকলকেই পুলিশের জালে তোলা সম্ভব হবে। ত্রিপুরা পুলিশের এআইজিপি আইন-শৃংখলা জানিয়েছেন, ওই মামলায় অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিতে নেমে পুলিশ ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ি উদ্ধার করেছে। সাথে অভিযুক্তের বাড়ি থেকে নগদ ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাই, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশের দল গঠন করা হয়েছে এবং ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি অভিযান জারি রয়েছে। সূত্রের খবর, গাড়ির চালকের বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাঁর খোঁজে পুলিশ তল্লাশি জারি রেখেছে।
2023-05-11