BRAKING NEWS

দেশে এফএম সংযোগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নতুন ৯১টি 100W এফএম ট্রান্সমিটারের উদ্বোধন করলেন

নয়াদিল্লি, ২৮ এপ্রিল,:
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৯১টি নতুন 100W এফএম ট্রান্সমিটারের উদ্বোধন করেন। এই উদ্বোধন দেশের রেডিও সংযোগকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে অনেক পদ্ম পুরস্কার প্রাপকের উপস্থিতিতে সন্তোষ ব্যক্ত করে তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, অল ইন্ডিয়া রেডিও-কে অল ইন্ডিয়া এফএম গড়ে তোলার লক্ষ্যে এফএম পরিষেবা বাড়াতে আজকের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অল ইন্ডিয়া রেডিও-র এই ৯১টি এফএম ট্রান্সমিটারের সূচনাকে তিনি ৮৫টি জেলা এবং দেশের ২ কোটি মানুষের উপস্থিতির অনুরূপ বলে জানান। শ্রী মোদী বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের রং ও বৈচিত্র্যের ঝলক পাওয়া যাবে। তিনি জানান যে নতুন এফএম ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে যে জেলাগুলি যুক্ত হবে সেগুলি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা এবং ব্লক। এক্ষেত্রে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও-র অসাধারণ সাফল্যে অভিনন্দন জানান। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাগরিকদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রভূত উপকৃত হবেন।

প্রধানমন্ত্রী রেডিও-র সঙ্গে এই প্রজন্মের আবেগগত সংযোগের উল্লেখ করেন। তিনি আসন্ন ‘মন কি বাত’-এর ১০০তম পর্বের উল্লেখ করে বলেন, “আমার ক্ষেত্রে এটা এক অতিরিক্ত আনন্দের যে রেডিও-র সঙ্গে আমার সম্পর্ক একজন উপস্থাপক হিসেবে।” তিনি বলেন, “দেশের মানুষের সঙ্গে এই জাতীয় এক আবেগগত সংযোগ রেডিও-র মাধ্যমেই সম্ভব। এর মাধ্যমে আমি দেশবাসীর কর্তব্যের সম্মিলিত শক্তি এবং দেশের শক্তির সঙ্গে যুক্ত।” এই বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘স্বচ্ছ ভারত’, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’র মতো উদ্যোগের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের ভূমিকার কথা বলেন যা ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে জন-আন্দোলনের চেহারা নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ফলে, এক অর্থে আমি আপনাদের অল ইন্ডিয়া রেডিও-র দলের অংশস্বরূপ।”

৯১টি এফএম ট্রান্সমিটারের উদ্বোধন এতদিন পর্যন্ত এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত অবহেলিতদের সুবিধা দেওয়ার স্বার্থে নীতিগতভাবে সরকারের একটি পদক্ষেপ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। যাঁরা এতদিন নিজেদের দূরের মনে করতেন, আরও বৃহত্তর স্তরে যুক্ত হওয়ার তাঁরা সুযোগ পাবেন বলে তিনি জানান। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথাযথ সময়ে প্রচার, গোষ্ঠী নির্মাণ প্রয়াস, কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে আবহাওয়ার শেষ খবর, কৃষকদের জন্য খাদ্যসামগ্রী ও সব্জির দামের তথ্য, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহারের ফল যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কৃষিতে উন্নত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নতুন বাজার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সহায়তা প্রদান প্রভৃতি এফএম ট্রান্সমিটারের সুবিধা মানুষ পেতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এফএম-এর তথ্যপ্রযুক্তিগত মূল্যের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রী মোদী বলেন যে প্রযুক্তি গণতন্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, ভারত যদি তার পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারে তাহলে কোনও ভারতবাসীর সুযোগের কোনও অভাব থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ এবং তাকে মূল্যসাশ্রয়ী করে তোলা হল মূলগত দিক। অপটিক্যাল ফাইবারের উল্লেখ করে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে সমস্ত গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার যুক্ত হওয়ায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবথেকে কম মূল্যে ডেটা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রামে ডিজিটাল উদ্যোগের ক্ষেত্রে এটা এক নতুন জোয়ার এনেছে। অনুরূপভাবে ইউপিআই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও রাস্তার হকারদেরকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে যে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটছে তা রেডিও, বিশেষত এফএম-কে এক নতুন আঙ্গিকে সজ্জিত করেছে। ইন্টারনেটের প্রসারের উল্লেখ করে তিনি বলেন যে রেডিও অনেক উদ্ভাবনী উপায়ে পডকাস্ট এবং অনলাইন এফএম হয়ে হাজির হতে পারছে। তিনি জানান, ডিজিটাল ভারত রেডিও-কে কেবল নতুন শ্রোতাই দেয়নি, এক নতুন চিন্তা প্রক্রিয়ারও জন্ম দিয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, প্রত্যেকটি সম্প্রচার মাধ্যমেই এই অনুরূপ বিপ্লব সাধিত হতে পারে। তিনি জানান যে ডিডি ফ্রি ডিশ পরিষেবা দেশে সর্ববৃহৎ ডিটিএইচ মঞ্চ। দেশের ৪ কোটি ৩০ লক্ষ বাড়িতে সঠিক সময়ে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে এই মঞ্চটি। এর ফলে, কোটি কোটি গ্রামের বাড়ির দরজায় বিশ্বের খবর এবং সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার খবর এসে হাজির হচ্ছে। তিনি জানান যে বহু দশক ধরে অবহেলিত সেইসব সম্প্রদায়ের কাছে শিক্ষা এবং বিনোদন পৌঁছচ্ছে। এর ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বৈষম্য দূর হচ্ছে এবং প্রত্যেকেই উন্নত তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ পাচ্ছেন। ডিটিএইচ চ্যানেলগুলিতে বিভিন্ন রকম শিক্ষা পাঠক্রমের সুযোগ রয়েছে যেখানে ঘরে বসে সরাসরি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান এসে পৌঁছচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে করোনা অতিমারীর সময়কালে এটি এক বিরাট সুবিধা হয়ে দেখা দেয়। ডিটিএইচ হোক কিংবা এফএম রেডিও – ভবিষ্যৎ ভারতের দিকে তাকাতে এই শক্তি আমাদের কাছে এক জানালা খুলে দেয়। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে তৈরি হতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

প্রধানমন্ত্রী ভাষাগত বৈচিত্র্যের বিস্তৃতির ওপর আলোকপাত করে বলেন যে এফএম ট্রান্সমিশন সমস্ত ভাষা এবং ২৭টি স্থানীয় ভাষা-ভিত্তিক অঞ্চলে পৌঁছবে। এই সংযোগ কেবলমাত্র যোগাযোগের সরঞ্জামই নয়, তা মানুষকেও যুক্ত করে। এর মধ্য দিয়ে এই সরকারের কর্মসংস্কৃতির দিকটিও প্রতিফলিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক সংযোগ শক্তিশালী করার পাশাপাশি বস্তুগত সংযোগের প্রসারের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সাংস্কৃতিক সংযোগের পাশাপাশি বৌদ্ধিক সংযোগকে শক্তিশালী করছে। প্রধানমন্ত্রী উদাহরণস্বরূপ বলেন, প্রকৃত জননায়কদের পদ্ম এবং অন্যান্য পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এগুলি প্রকৃত অর্থেই জন-পুরস্কারের স্বীকৃতি পাচ্ছে। তিনি বলেন যে এখন আর অতীতের মতো নাম প্রস্তাবের ওপর নির্ভর করে পুরস্কার দেওয়া হয় না, বরং পদ্ম পুরস্কার দেওয়া হয় রাষ্ট্র এবং সমাজের প্রকৃত সেবার স্বীকৃতি হিসেবে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয় এবং তীর্থস্থানগুলির সংস্কারের ফলে পর্যটন বিশেষভাবে প্রসার লাভ করেছে। বেশি সংখ্যক মানুষের পর্যটন কেন্দ্রগুলি সফর দেশের সাংস্কৃতিক সংযোগ বৃদ্ধির উদাহরণ বলে জানান শ্রী মোদী। আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে সম্পর্কিত সংগ্রহালয়গুলির পাশাপাশি বাবাসাহেব আম্বেদকর পঞ্চতীর্থ, প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় এবং জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের উদাহরণ দেন তিনি এবং বলেন এই জাতীয় উদ্যোগ দেশের বৌদ্ধিক এবং ভাবাবেগগত সংযোগের এক নতুন মাত্রা প্রদান করেছে।

ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী অল ইন্ডিয়া রেডিও-র মতো সমস্ত যোগাযোগ চ্যানেলের লক্ষ্য এবং দিশা উল্লেখ করে বলেন, যে কোনও ব্যবস্থার মাধ্যমেই হোক এর উদ্দেশ্য হতে হবে দেশকে এবং তার ১৪০ কোটি মানুষকে যুক্ত করা। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, সমস্ত অংশীদার এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চললে তাঁদের নিয়মিত আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

দেশের এফএম সংযোগ প্রসারে সরকারের দায়বদ্ধতাস্বরূপ ৯১টি নতুন 100W এফএম ট্রান্সমিটার ১৮টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৫টি জেলায় স্থাপন করা হয়েছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা এবং সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলকে অনুষ্ঠান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করবে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে – বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, লাদাখ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। অল ইন্ডিয়া রেডিও-র এই এফএম পরিষেবা প্রসারের ফলে অতিরিক্ত ২ কোটি মানুষ যাঁদের ইতিপূর্বে এই অনুষ্ঠান শোনার সুবিধা ছিল না, তাঁরা এখন তা শুনতে পাবেন। এর ফলে প্রায় ৩৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় পরিষেবা প্রসারিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *