হাওয়া সিনেমার গানে নাম দেওয়া হয়নি গীতিকার মনিরুদ্দিন আহমেদের নাম

সিউড়ি, ২৬ এপ্রিল (হি. স.) : ফের বঞ্চিত বীরভূমের গীতিকার! বাংলা ছায়া ছবি তে গান ব্যবহার হলেও গীতিকারের নাম দেওয়া হল না। বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ ছবি নিয়ে এপার বাংলার নদীতে ও ঝড় উঠেছে। চঞ্চল চৌধুরীদের দেখার জন্য নন্দন চত্বরে ছিল তুমুল ভিড়, লম্বা লাইন। জনপ্রিয় সেই ছবি জড়াল বিতর্কে।

অভিযোগ, ‘আটটা বাজে দেরি করিস না…’ গানে মেতে উঠেছে দুই বাংলা। কারন গানের সঙ্গে মাঝ নদীতে নৌকার উপর দৃশ্য মন কেড়েছে সকলেরই কিন্তু মনে চরম ব্যাথা পেয়েছেন ওই গানের গীতিকার। কারন শিল্পীর নাম দেওয়া হয় নি সিনেমার ক্রেডিট লিস্টে। অথচ প্রায় তিন দশক আগে লেখা গানের খাতা বুকে জড়িয়ে ধরে অশীতিপর বৃদ্ধ গীতিকার আজ তাই বড় অভিমানী। তিনি গীতিকার মনিরুদ্দিন আহমেদের।
বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ির লালকুঠি পড়াতে থাকেন ৮১ বছরের প্রবীন মনিরুদ্দিন। দুই ছেলে একজন শিক্ষক, অপর জন শিল্পী। তাই সাধ করে বাড়ির নাম রেখেছেন ‘তুলি কলম’। বীরভূম জেলা পঞ্চায়েত অফিসের কর্মী ছিলেন। ২০ বছর আগেই অবসর নিয়েছেন। কিন্তু গান লেখা শুরু তার কলেজ জীবন থেকেই। প্রায় তিনশো অধিক গানের রচয়িতা

মনিরুদ্দিন। মানবজীবনের চলমান প্রতিচ্ছবি তার গানে উঠৈ এসেছে বার বার। পন প্রথা, সতিনের গান, পঞ্চায়েতের গান, ছাদ পেটানো গান, নদী পথের গান তার আনন্দ।বিখ্যাত শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী, কার্তিক দাস বাউল। বাসুদেব দাস বাউল, জিতেন নন্দী, আমিনুর রসিদ মত শিল্পীরা তার গানে গলা দিয়েছেন। অত্যন্ত সাধারণ, সাধাসিধৈ জীবন যাপন করেন গীতিকার
মনিরুদ্দিন।

চঞ্চল চৌধুরী অভিনিত “হাওয়া” সিনেমার “আটটা বাজে দেরি করিস না” গানটির গীতিকার ও সুরকার মনিরুদ্দিন আমেদ। কবি ১৯৮৬ সালে এই গান টি লেখেন। শিল্পীর কথায়, এই গান টি আসলে, মাছ বাজারের কথোকথা। গানের সঙ্গে সমকালীন পরিবেশের সম্পর্ক রযেছে তা গানে উল্লেখিত মাছের ৩০ টাকা দাম থেকে বোঝা যাচ্ছে। মনিরুদ্দিন জানান, ১৯৮৬ সালে তিনি গানটি লিখেছিলেন। তা নিয়ে একটি ক্যাসেটও হয়েছিল, যাতে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘হাওয়া’ সিনেমায় নামটি ব্যবহার করা হয়নি। শিল্পী শুধু চান, তাঁর নামটি যেন সিনেমার ক্রেডিট লিস্টে ব্যবহার করা হয়।অথচ শিল্পীর নাম সিনেমার ক্রেডিট লিস্টে দেওয়া হয়নি। তাতেই শোরগোল নেটদুনিয়ায়।
এই নিয়ে ইতিমধ্যেই বীরভূম জেলার ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (প:ব:) সদস্য বিশ্বজিৎ দাস সোস্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আটটা বাজে দেরি করিস না গানটির গীতিকার ও সুরকার মনিরুদ্দিন আহমেদ। উনার লেখা অসংখ্য গান গেয়েছেন স্বপ্না চক্রবর্তী, আমিনুর রসিদ, কার্তিক দাস বাউল, বাসুদেব দাস বাউল, জিতেন নন্দী এবং অনেকে…। দুঃখের বিষয় এটাই যে গানটি ‘হাওয়া’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ঠিকই কিন্তু গানটির রচয়িতা মনিরুদ্দিন আহমেদ তাঁর যথাযথ সম্মান পেলেন না। উনার নাম ব্যবহার না করে প্রচলিত গান বলে চালিয়ে দেওয়া হল…কেন…..? লেখকের হয়ে, ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক-সহ সমস্ত কলাকূশলীদের কাছে লেখককে সঠিক মর্যাদা দেওয়ার আবেদন রাখছি…হাওয়া টিমের উচিত ছিল গানটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করে শিল্পীকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া…এই বিষয়ে ‘হাওয়া’ সিনেমা টিম দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এ আমাদের বিশ্বাস।” এর আগেও বীরভূমের শিল্পী রতন কাহারের নাম বড় লোকের বিটি লো গানে দেওয়া হয় নি। তা নিয়ে ও সোচ্চার হয় এই সময়।
গীতিকার মনিরুদ্দিন আহমেদ বলেন,” আমি এই বয়সে এসে শিল্পী নাম টুকু পেতে চাই। কারন এর আগেও এই গানের ক্যাসেট হয়েছিল। তখন আমার নাম লেখা হয়েছিল। কিন্তু এই সিনেমায় আমার নাম ব্যবহার করা হয় নি।”