হাফলং (অসম), ২৪ এপ্রিল (হি.স.) : পূর্বতন উত্তর কাছাড়, অধুনা ডিমা হাসাও জেলাকে দু-ভাগ করে দুটি পৃথক জেলা গঠন ও পৃথক স্বশাসিত পরিষদ এবং পিআরসির ভেরিফিকেশন বন্ধ করার দাবিতে ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম নামের সংগঠন আগামী ২৬ জুলাই থেকে অনিৰ্দিষ্টকালের জন্য ডিমা হাসাও জেলা বনধ-এর ডাক দিয়েছে। ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম আহূত বনধ-এর বিরোধিতা করে আজ সোমবার পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন দল-সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদী কৰ্মসূচি পালন করেছে।
ডিমাসা জনগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন জাদিখে নাইশো হসম, ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, অল ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ডিমাসা মাদারস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ও পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠনগুলির যৌথ সমন্বয় সমিতির সমর্থনে সোমবার হাফলং পুর নিগমের মাঠ থেকে এক প্রতিবাদী মিছিল বের করে ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম (আইপিএফ) গো ব্যাক, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ডিমা হাসাও জেলার বিভক্তিকরণ মানব না, আমরা শান্তি চাই, ইত্যাদি নানা স্লোগানে সহস্রাধিক জনতা উত্তাল করে তুলেন হাফলং শহরে।
বনধ-এর বিরোধিতা করে প্রতিবাদী মিছিল হাফলং পুর নিগমের মাঠ থেকে বেরিয়ে হাফলং সিনোড রোটারি হয়ে সমগ্র শহর পরিক্রমা করে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ রোটারি হয়ে হাফলঙে জেলাশাসকের কার্যলয়ের সামনে এসে শেষ হয়। তার পর মিছিলকারীরা বনধ-এর বিরোধিতা করে ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ডিমা হাসাও জেলাকে দুভাগ করা চলবে না, দাবি জানিয়ে ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসক মারফত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার উদ্দেশ্যে এক স্মারকলিপি প্রদান করে।
এদিকে মিছিল শেষে ডিমাসা জনগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন জাদিখে নাইশো হসমের সভাপতি কল্যাণ দাওলাগাপু সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কয়েকজন প্রাক্তন সদস্য ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম নামে তথাকথিত সংগঠন তৈরি করে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ডিমা হাসাও জেলাকে দুভাগ করার চেষ্টা চালিয়ে পাহাড়ি জেলায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। তবে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ডিমা হাসাও জেলাকে দুভাগ করার চেষ্টা আমরা সফল করতে দেব না, আমরা কোনও দিনও তা মেনে নেব না। তিনি
বলেন, আমরা শান্তি চাই এবং ডিমা হাসাও জেলায় বসবাসরত সকল জাতি-জনগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যেতে চাই। কল্যাণ দাওলাগাপু বলে, তার পরও যদি ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম নামের সংগঠন ডিমা হাসাও জেলা বনধ-এ অনড় থাকে, তা-হলে আগামীদিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।
এদিকে ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রমিত সেংইয়ং সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বনধ-সংস্কৃতি ডিমা হাসাও জেলার জন্য ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক এবং এই বনধ-সংস্কৃতির দরুন শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই আজ এই বনধ-এর বিরোধিতা করে বিভিন্ন দল-সংগঠন ও বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, ডিমা হাসাওয়ে শান্তি ফিরে এসেছে। তাই উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলছে। তবে বনধ ডেকে এভাবে ডিমা হাসাও জেলায় অশান্তি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না কোনও অবস্থায়, তার জন্য প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রমিত সেংইয়ং বলেন, উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদে যে সকল জাতি-জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদের সবাইকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। তার পরও ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম ডিমাসা জনগোষ্ঠীর মানুষ খারাপ বলে গালিগালাজ করে যা ঠিক নয়। তিনি বলেন, পৃথক স্বশাসিত রাজ্যের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু ডিমাসা জনগোষ্ঠীর মানুষ তার জন্য কোনও জাতি-জনগোষ্ঠীকে খারাপ বলেনি বা গালিগালাজও কোনও দিন দেয়নি।
সেংইয়ং বলেন, কোনও জাতির বিরুদ্ধে এ ধরনের মনোভাব বা বিষোদ্গার করা সমাজের জন্য ক্ষতিকারক এবং কোনও জাতি-জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কটূ মন্তব্য কখনও মেনে নেওয়া যায় না।

