নয়াদিল্লি, ৬ এপ্রিল (হি. স.) : গত ৪৩ বছরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দল আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে । বৃহস্পতিবার দলের জন্মদিবসে নয়া দিল্লির সদর দফতর থেকে বিজেপি-র কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এমনটাই দাবী করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখানেই থেমে গেলে হবে না। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। বড় স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নপূরণের ক্ষমতা আপনাদের রয়েছে।’’ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেই যে তাঁর এই মন্তব্য, তা স্পষ্ট করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ইতিহাস গড়েছিলেন দেশবাসী। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’’
৪৪ তম বর্ষে পা দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। বিজেপির এই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এদিন দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নয়া দিল্লির সদর দফতর থেকে বিজেপি-র কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির কার্যালয় থেকে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমে সকলকে হনুমান জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পবনপুত্র হনুমানের মতো কঠোর হাতে রাক্ষস দমনের আবেদন জানান। গত ৪৩ বছরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দল আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন মোদী।
তাঁর কথায়, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে কেউ হারাতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয় জয় করতে হবে।’’দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও মোদীর নিশানায় ছিল ‘কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র’। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দীপ্রাচীন দলকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছাড়লেও ওদের গোলামির মানসিকতার ইতি হয়নি।’’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি ‘বাদশাহি’ মানসিকতা এবং মানুষের সমস্যা উপেক্ষা করার অভিযোগও তুলেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজেপি দিন-রাত এক করে দেশের জন্য কাজ করছে। আমাদের দল মা ভারতীর প্রতি উৎসর্গ। সংবিধান ও দেশ রক্ষায় ব্রতী বিজেপি। তিনি বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসে সমস্ত কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, কর্মীরা রক্ত-ঘাম ঝ়ড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বলেই আমরা দেশ সেবা করার সৌভাগ্য পেয়েছি। তিনি বলেন, বিজেপি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রার্থনা’ এই মন্ত্র নিয়ে কাজ করছে।
তাঁর সরকারের সাফল্যের তালিকা দিতে গিয়ে প্রথমেই জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের কথা বলেছেন মোদী। তার কথায়, ‘‘কাশ্মীরে শান্তির সূর্যোদয় হয়েছে।’’ আগামী ৬ বছর পরে বিজেপির ৫০ বছর পূর্তিতে নতুন সাফল্যের নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। সাংগঠনিক কার্যকলাপে প্রযুক্তির আরও সাহায্য নেওয়ার কথাও বলেছেন।
বিনামূল্যে রেশন, চিকিত্সা এবং শৌচালয় প্রকল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, বিজেপির জোর সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর। বিজেপি সামাজিক ন্যায়বিচারের চেতনাকে আক্ষরিক অর্থে অনুসরণ করে। ৪০ কোটি মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাওয়া সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। বৈষম্য ছাড়াই ৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পায়েছে। এটা সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি শক্তিশালী অভিব্যক্তি। বৈষম্য ছাড়াই ৪৫ কোটি দরিদ্রের জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা সামাজিক ন্যায়বিচারের অন্তর্ভুক্তিমূলক এজেন্ডার একটি জীবন্ত উদাহরণ। ১১ কোটি মানুষকে শৌচালয় দেওয়া সামাজিক ন্যায়বিচার। তুষ্টি এবং বৈষম্য ছাড়াই, বিজেপি প্রকৃত অর্থে সামাজিক ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার জন্য একটি সমার্থক শব্দ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আজ, ভারত সমুদ্রের মতো বিশাল চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করতে এবং মোকাবিলা করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম।
ইতিহাস বলছে, জনসঙ্ঘ থেকে ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া বিজেপির উত্থান রাতারাতি হয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের লড়াই ছিল দীর্ঘ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেন, সেই সময়ে তৈরি হওয়া ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই আজ বড় শক্তি নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। দেশের ১৭টি রাজ্যে একা অথবা জোট গড়ে সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। ৪৩ বছরের এই পথ চলায় বিজেপির ব্যর্থতার নজিরও কম নয়। ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটে মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল পদ্মশিবির। আবার পর পর দু’বার জোট গড়ে ক্ষমতায় এসেও তারা পূর্ণ সময় টেকাতে পারেনি সরকার। প্রথম বার ১৩ দিন ও দ্বিতীয় বার ১৩ মাসের মাথায় পড়ে গিয়েছিল বাজপেয়ী সরকার। পরে অবশ্য পাঁচ বছর সরকার চালানোর সাফল্যও দেখেছে বিজেপি।
কিন্তু ২০০৪ সালের পরে আবার টানা ১০ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে। ২০১৪ সালের পরে যে ছবি আবার বদলেছে। এ বার মোদীর লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয়ের হ্যাটট্রিক। বৃহস্পতিবার সেই লক্ষ্যেই বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বলেছেন ‘সমমনস্ক’ দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার কথাও। যা শুনে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মনে। তবে কি লোকসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান পদ্ম শিবির?
দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করছে পদ্ম-শিবির। দেশ জুড়ে বিজেপি কর্মীরা দেওয়াল লিখনের কাজ শুরু করে দেবেন। প্রাথমিক ভাবে দু’টি স্লোগানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হল ‘এক বার ফির সে মোদী সরকার’, অন্যটি হল ‘এক বার ফির সে ভাজপা সরকার’। মোদী বক্তব্য রাখার পরেই দিল্লিতে ওই দেওয়াল লিখন কর্মসূচির সূচনা করবেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। প্রাথমিক ভাবে গোটা দেশে প্রায় ১০.৭২ লক্ষ জায়গায় ওই দেওয়াল লিখন হবে। একই সঙ্গে দল জানিয়েছে, গোটা দেশের ১০ লক্ষ স্থানে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ্য, বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে মোদীর বার্তা পৌঁছে দিয়ে জনভিত্তি বাড়ানো।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দল কচ্ছ থেকে উত্তর-পূর্ব এবং কাশ্মীর থেকে কেরালা পর্যন্ত তার চিহ্ন রেখে গেছে। আমাদের কর্মীরা দলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলটি আজ ১ লাখ ৮০ হাজার শক্তি নিয়ে কেন্দ্রে কাজ করছে। ৮ লাখ ৪০ হাজার বুথে উপস্থিত রয়েছেন বিজেপির বুথ সভাপতি। তিনি বলেন, আমি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আমাদের কোটি কোটি কর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আজ আমাদের অঙ্গীকার নিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এক মুহূর্তও বসে থাকবো না এবং দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।
এর আগে দিল্লিতে দলের সদর দফতরে বিজেপির পতাকা উত্তোলন করেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা।

