প্রসঙ্গ অসম চুক্তি, মনঃপূত হয়নি সরকারের জবাব, বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট কংগ্ৰেসের

গুয়াহাটি, ৫ এপ্রিল (হি.স.) : অসম বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের ত্রয়োদশ দিন আজ অসম চু্ক্তি প্রসঙ্গে উত্তাল করে তুলেছেন বিরোধী কংগ্ৰেস বিধায়করা। অসম চুক্তি সম্পর্কে বিরোধী দলনেতা দেবব্ৰত শইকিয়ার উত্থাপিত এক প্ৰশ্নের মনঃপূত উত্তর পাননি অভিযোগ করে কংগ্ৰেসের বিধায়করা সদনের পরিস্থিতি উত্তাল করে তুলেন। পরে তাঁরা সকলে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

বিধায়ক দেবব্ৰত শইকিয়ার ছিল, অসম চুক্তির ৫ এবং ৬ নম্বর দফা রূপায়ণের জন্য রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? বিদেশি নাগরিক শনাক্তকরণের জন্য অসম চুক্তি অনুযায়ী গৃহীত সময়সীমা পরিবৰ্তন করা হচ্ছে নাকি? ৬ নম্বর দফা রূপায়ণের জন্য গঠিত সমিতির পরামৰ্শবলি কবে রূপায়ণ করা হবে?

সঙ্গে শইকিয়ার প্ৰশ্ন, অসম চুক্তি রূপায়ণের নোডাল ডিপাৰ্টমেন্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্ৰালয়কে ৬ নম্বর দফা রূপায়ণের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত সমিতির প্ৰতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কিনা? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে অসম চুক্তির ৫ নম্বর দফা মূল্যহীন হয়েছে কিনা? অসম চুক্তি রূপায়ণের জন্য অসম সরকার অসমীয়ার সংজ্ঞা কীভাবে নিরূপণ করেছে।
এভাবে বিরোধী দলনেতার একাধিক প্ৰশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অসম চুক্তি রূপায়ণ দফতরের মন্ত্ৰী অতুল বরা বলেন, রাজনৈতিক (খ) বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অসম চুক্তির ৫ নম্বর দফার রূপায়ণ করতে ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬ এবং ফরেনার্স (ট্ৰাইবুনাল) অৰ্ডার ১৯৬৪ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্ৰী বরা সঙ্গে জানান, অসম চুক্তি রূপায়ণ বিভাগ বিদেশি নাগরিক শনাক্তকরণের জন্য চুক্তি অনুযায়ী ভিত্তিবর্ষ পরিবৰ্তন করা হয়নি। ৬ নম্বর দফা রূপায়ণের জন্য গঠিত সমিতির পরামৰ্শবলিগুলি অসম সরকার কর্তৃক গঠিত উপ-সমিতি এখনও অধ্যয়ন এবং পৰ্যালোচনা করছে। উপ-সমিতির প্ৰতিবেদন সম্পূৰ্ণ হলে পরবৰ্তী পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা হবে, জানান মন্ত্ৰী অতুল বরা।
দেবব্ৰত শইকিয়ার অন্য প্ৰশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বরা জানান, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ কেন্দ্ৰীয় সরকার প্ৰণয়ন করেছে। তাই এই আইন অসম চুক্তির ৫ নম্বর দফা মূল্যহীন করেছে কি না, সে সম্পর্কে মতামত দেওয়ার কর্তৃত্ব বা অধিকার রাজ্য সরকারের নেই। এদিক, তাঁর বিভাগ এখনও অসমীয়ার সংজ্ঞা নিরূপণ করেনি বলেও সদনকে জানান মন্ত্ৰী অতুল।
বিভাগীয় মন্ত্ৰী অতুল বরার উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে কংগ্ৰেসের বিধায়করা এর প্ৰতিবাদ জানান। কংগ্ৰেসের বিধায়ক জাকির হুসেন শিকদার মন্ত্ৰীর উত্তর সন্তোষজনক নয় অভিযোগ তুলে প্ৰশ্ন করেন, ‘অসম চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর অসম গণ পরিষদ (অগপ) রাজ্যে দু-দুবার সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন হয়েছিল৷ অথচ এ ব্যাপারে কিছুই করেনি অগপ সরকার৷ এখনও বিজেপির সঙ্গে অসম গণ পরিষদ সাত বছর ধরে ঘর করছে, সরকারে শামিল রয়েছে। অসম চুক্তি রূপায়ণের ব্যাপারে কী করছে অসম গণ পরিষদ? অসম চুক্তিকে আপনারা সম্মান করেন কি না?’ এর পর অসম চুক্তি সম্পর্কে সরকার বিভ্ৰান্তিমূলক তথ্য সদনে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কংগ্ৰেসি বিধায়করা এক হুলস্থুল পরিবেশের সৃষ্টি করেন।
কংগ্ৰেসের প্ৰতিবাদ সম্পর্কে মন্ত্রী অতুল বরার কটাক্ষ, অসম চুক্তির কথা বললে ভূতের মুখে রাম নাম যেন লাগে। এর মধ্যে কিছুটা এগিয়ে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী পীযূষ হাজরিকা বলেন, ‘আমিও কংগ্ৰেসের বিধায়ক ছিলাম৷ যুব কংগ্ৰেসের সভাপতি ছিলাম আমি৷ আমি যতদিন কংগ্ৰেসে ছিলাম, কোনও এক মিটিঙে কংগ্ৰেসের কাউকে অসম চুক্তি প্রসঙ্গে রা কাড়তে বা আলোচনা করতেও দেখিনি৷ কেবল কা আন্দোলন (নাগিরকত্ব সংশোধনী আইন) থেকে কংগ্ৰেসিরা সুবিধাবাদী নীতি নিয়ে অসম চুক্তির কথা বলছেন৷’
মন্ত্ৰী হাজরিকার এই বক্তব্য শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন বিরোধী কংগ্ৰেসের বিধায়করা। তাঁর এই বক্তব্যের প্ৰতিবাদ করে প্ৰশ্নকালীন আওয়ারে বিধানসভা ত্যাগ করেন কংগ্রেস বিধায়করা৷