নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মার্চ৷৷ বাসন্তী পূজা সমাগত প্রায়৷ এবছর বাসন্তী পুজো চলবে ২৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত৷ প্রতিমা তৈরি করতে এখন মৃৎশিল্পীরা চরম ব্যস্ততায়৷ এ বছর পূজার সংখ্যা খানিকটা বেড়েছে বলে জানালেন মৃত শিল্পীরা৷ হিন্দু বাঙ্গালীদের অন্যতম প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা৷ আশ্বিন মাসে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি অকালবোধন৷ চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী পূজা হল হিন্দু বাঙ্গালীদের কালের পূজা৷ বাসন্তী পূজাকে কেন্দ্র করেও হিন্দু বাঙ্গালীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কোন অন্ত নেই৷ রাজধানী আগরতলা শহরসহ রাজের বিভিন্ন স্থানে ক্লাব সামাজিক সংস্থা এবং বাড়ি ঘরে প্রতিবছর বাসন্তী পূজার সংখ্যা বাড়ছে৷ বাসন্তী পূজাকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যেই উৎসাহ উদ্দীপনার পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ ১ বছর আগরতলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বাসন্তী পূজোর সংখ্যাও বেড়েছে বলে মৃৎশিল্পীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে৷ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি৷ সে কারণেই মরতে পারায় মৃত শিল্পীদের ব্যস্ততা বর্তমানে তুঙ্গে৷
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই বাঙালির আদি দুর্গাপুজো৷ যদিও এখন আশ্বিন শুক্লপক্ষের দুর্গাপুজোই বেশি আড়ম্বরে পালিত হয়৷
এখন যতই আমরা আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজো করি না কেন, বাঙালির আদি দুর্গাপুজো হত এই চৈত্র মাসেই৷
পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন৷ যা পরে বাসন্তী পুজো নামে প্রসিদ্ধ হয়৷ দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে৷সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন৷ কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি৷ কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন৷ এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়৷ কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ৷ বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন৷
ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন৷ কিন্তু রাজা শান্তি পান না৷ এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়৷ তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে৷ তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন৷
তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তারা চেয়ে যাচ্ছেন৷ ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা৷ এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন৷ ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন৷ পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন৷ শুরু হয় বাসন্তী পুজো৷
দুর্গা পুজো বাঙালিদের প্রধান অনুষ্ঠান, যার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে প্রতি ঘরের কচি-কাচা থেকে প্রবীণ দাদু-ঠাকুমারাও৷ জাতিধর্ম নির্বিশেষে এই বিশেষ উৎসব নিয়ে মেতে ওঠে সবাই৷ একটি বছরে চারটি নবরাত্রি আসে, তার মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি, তবে শরত নবরাত্রি এবং বসন্ত নবরাত্রির উদযাপন প্রায় গোটা দেশজুড়েই হয়ে থাকে৷ সূর্য ও চন্দ্রের নির্দিষ্ট অবস্থান মেনে চলার মাধ্যমে নবরাত্রি পালিত হয়৷ বসন্ত নবরাত্রিটি পালিত হয় বাসন্তী পুজো হিসেবে৷ শারদীয় দুর্গাপূজার মত এই বাসন্তী পুজোও দেবী দুর্গারই আরাধনার জন্য করা হয়৷ আদি কালে দূর্গার আরাধনায় বাসন্তী পুজোই করা হত৷ তবে আজও বসন্ত নবরাত্রিতে নয় দিন ব্যাপী দেবী দুর্গার পুজো করা হয়৷ কিন্তু এই বাসন্তী পূজা এখন কিছু জমিদার বাড়ি তথা বনেদি বাড়িতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে৷
অন্যদিকে কৃত্তিবাসীয় রামায়ণে বর্ণনা করা হয়েছে যে শ্রী রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার পর যখন সীতা হরণ হয়, তখন রাবণকে হারিয়ে সীতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য শরৎকালে মহামায়ার আরাধনা করেছিলেন৷ সেই সময় সূর্যের দক্ষিণায়ন চলে, তাই দেব-দেবীরা নিদ্রায় থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়৷ সেই আশ্বিন মাসের পুজোই এখন গোটা বিশ্বে প্রসিদ্ধ দুর্গা পুজো৷ এই পুজাটি অকালে করা হয়েছিল বলেই একে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে৷ তবে বাঙালিরা আদি দুর্গাপুজো অর্থাৎ বাসন্তী পূজাকে কোনও দিনই পুরোপুরিভাবে ভুলে যায়নি৷ তাই আজও অনেক জায়গাতেই মহামায়ার পুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন বেশ আড়ম্বর করে করা হয়৷
2023-03-22