করিমগঞ্জ (অসম), ২১ মার্চ (হি.স.) : দীর্ঘ ৬০ বছরের এক ব্যতিক্রমী ইতিহাস উত্তর পূর্ব ভারতের নদওয়াতুত তামীর নামক ইসলামিক সংগঠনের। যার সূচনা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রখ্যাত মনীষী তথা ৩৩ বছরের অসম বিধানসভার বিধায়ক প্রয়াত মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী (রহঃ)-র হাত ধরে।
বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়ে আজ উত্তর পূর্ব ভারতের আনাচে কানাচে নদওয়া নামক সংগঠনটি বিদ্যমান। বহুমুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী মরহুম চৌধুরী সাহেবের চিন্তাধারাও ছিল বহুমুখী।
গতকাল সোমবার রাতে উত্তর করিমগঞ্জের পানীঘাট বাজার সংলগ্ন ক্রিসেন্ট সেকেন্ডারি স্কুলে এমারতে শরিয়াহ ও নদওয়াতুত তামিরের করিমগঞ্জ জেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলনে উক্ত বক্তব্য গুলো উঠে আসে নদওয়া ও এমারতের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মাওলানা ফরিদুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বক্তব্যে । প্রসঙ্গক্রমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মীয় দ্বিধা দ্বন্দ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান মাওলানা ফরিদুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম আমিরে শরিয়ত প্রয়াত মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ২য় আমিরে শরিয়ত ড০ আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভুইয়ার বহুমুখী কার্যকলাপের চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করতে নদওয়া ও যুব নদওয়ার কর্মীদের আহ্বান জানান আমিরে শরিয়ত মাওলানা ইউসুফ আলী।
উত্তর পূর্ব ভারতের নাইবে আমিরে শরীয়ত মাওলানা বদরুল হক এমনীর পৌরহিত্যে জেলা নদওয়ার উদ্দোগে আয়োজিত সম্মেলনের প্রস্তাবাদি গুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে জেলা কমিটিকে আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় নদওয়ার মহাসচিব প্রাক্তন বিধায়ক মাওলানা আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন করিমগঞ্জ জেলা জমিয়ত উলামা হিন্দের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মওলানা হুসাইন আহমেদ। নেজামুল মুসলিমিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হামিদ। প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নদওয়ার সম্পাদক মাওলানা ড০ ফজলুর রহমান লস্কর, মাওলানা চৌধুরী উসামা মবরু, মাওলানা আসহাব উদ্দিন, মাওলানা আবুল খয়ের মাহবুব বড়ভুইয়া। বদরপুর টাইটেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মওলানা আব্দুল ওয়ারিস, জেলা ক্বাজীয়ে শরিয়ত মাওলানা ইমদাদুর রহমান, জেলা মুলক্কিন মাওলানা আব্দুল মজিদ, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এটি এম জাকারিয়া, যুব নদওয়ার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জসিম উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আইনজীবী হুসাইন আহমেদ চৌধুরী, রয়েল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী, অভ্যর্থনা সমিতির কার্যকরী সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়ারিস, পানীঘাট জিপি সভাপতির প্রতিনিধি মুজাক্কির হুসেন প্রমুখ।
সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা নদওয়ার সভাপতি মুফতি আব্দুল বাসিত আল-ক্বাসিমি। তাঁর বক্তব্যে সুদ ঘুষ,মদ জোয়া এবং নেশাজাতীয় দ্রব্যের অপকারিতা উঠে আসে, পাশাপাশি যুব সমাজের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সর্বোপরী সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান মুফতি বাসিত।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে সকাল দশটা থেকে শুরু হয় ছবাহি মক্তব সমূহের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্টান ও প্রদর্শনী সভা। সন্ধ্যা পর থেকে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত চলে আমন্ত্রিত অতিথিদের বিষয় ভিত্তিক আলোচনা। নির্ধারিত কর্মসূচি হিসাবে ড০ আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় যৌথভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের আমীরে শরিয়ত মাওলানা ইউসুফ আলী ও নাইবে আমিরে শরিয়ত মাওলানা বদরুল হক এমনী দ্বয়কে। অ্যাওয়ার্ডের নগদ অর্থ পঞ্চাশ হাজার টাকা জেলা নদওয়ার তহবিলে দান করে দেন উভয় গুনীজন। এছাড়াও নদওয়ার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে জড়িত জীবিত কর্মীদের বিশেষ সম্মাননা এবং প্রয়াত কর্মীদের মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় এদিনের সম্মেলনে।
উক্ত সম্মেলনে ৭ টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রয়াত কর্মীদের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সম্মেলনে তানজিমুল মাদারিসিল ইসলামিয়ার অধীনে মাদ্রাসা সমূহে সন্তানাদি ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী জেলা করিমগঞ্জের সদরে একটি ভিসা অফিস স্থাপন করার জন্য রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি চলমান মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারংবার ফাঁস হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের চরম মানসিক আঘাত হানছে, তৎসঙ্গে অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন, এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর ঘাট এবং শহরস্থিত পাথারকান্দি রোডের রেল গেইটে উড়াল সেতু নির্মাণ, করিমগঞ্জ -লক্ষীবাজার সড়কের পরিসর বৃদ্ধি ও সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় উক্ত সম্মেলনে।
মাহফিলের শেষ লগ্নে রমজানের গুরুত্ব মহত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শেষে বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে সমবেত মোনাজাত করেন আমিরে শরিয়ত মওলানা ইউসুফ আলী সাহেব।
এদিকে উত্তর পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় আমিরে শরিয়তের স্মৃতি রক্ষার্থে বিধায়ক কমলাক্ষর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রয়াত আমিরে শরিয়তের সুযোগ্য পুত্র মাওলানা আবুল খয়ের মাহবুব বড়ভূঁইয়া প্রাপক পরিবারের পক্ষ থেকে বিধায়ক কমলাক্ষের প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

