ত্রিপুরার ৭০ শতাংশের অধিক লোক তাদের জীবিকার জন্য কৃষি ও বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। তাই রাজ্যের এই ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা জারি রাখা উচিত। তেমনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খেলাধুলার ক্ষেত্রেও আমাদের যোগদান বাড়িয়ে ত্রিপুরাকে এক শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। আজ আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে একথা বলেন রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শংকর দে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ এবং রাজ্য পুলিশের পদস্থ আধিকারিকগণ। ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজ্যপাল রাজ্যবাসী ও সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজকের দিনটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই দিনটিতেই অর্থাৎ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ড. ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি দ্বারা তৈরি ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল এবং ভারত এক সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আমাদের সংবিধানে আমাদের দেশের নাগরিকদের ন্যায়, স্বাধীনতা, সমান অধিকার ও সৌভ্রাত্বের পরিবেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে ভারত এক সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সমস্ত ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এই উপলক্ষে রাজ্যপাল যারা আমাদের দেশের ও বিদেশের শত্রুদের কাছ থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখেন তাদের অভিনন্দন জানান। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী, রাজ্য পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজ্যপাল বলেন, আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে আমরা কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে এক সমৃদ্ধ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলবো।
আসাম রাইফেলস মাঠে আয়োজিত ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে অভিবাদন জানান বিএসএফ, আসাম রাইফেলস, টিএসআর, মহিলা টিএসআর প্ল্যাটুন, ত্রিপুরা পুলিশ, মহিলা আরক্ষা বাহিনী, ফরেস্ট প্ল্যাটুন, হোম গার্ড বাহিনী। তাছাড়াও কুচকাওয়াজে অংশ নেয় এনসিসি বয়েজ এন্ড গার্লস, স্কাউট এন্ড গাইডস, সিভিল ডিফেন্স ও আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল।
কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন ১২নং টিএসআর বাহিনীর কমান্ডেন্ট রানাদিত্য দাস। কুচকাওয়াজে সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম হয়েছে আসাম রাইফেলস বাহিনী, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে টিএসআর প্রথম বাহিনী ও মহিলা টিএসআর প্ল্যাটুন। নন সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম হয়েছে আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে এনসিসি বয়েজ ও এনসিসি গার্লস ।
অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে যে সমস্ত পুলিশ অফিসার ও পুলিশ কর্মীগণ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল ফর ডিস্টিংগুইশ সার্ভিস পুরস্কার পাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজিপি সৌরভ ত্রিপাঠী। তাছাড়াও পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস পুরস্কার পাচ্ছেন ভানুপদ চক্রবর্তী (এসপি ক্রাইম ব্রাঞ্চ), অমল দেববর্মা (অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট, ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ান টিএসআর), কমল শুরুদাস (ডিএসপি সিকিউরিটি), হেমন্ত বিষ্ট (সুবেদার, টিএসআর ৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ান), মনিন্দ্র বর্ধন (সুবেদার, টিএসআর ৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ান) ও আশিস কুমার দাস (সাব ইন্সপেক্টর)। হোম গার্ডস ও সিভিল ডিফেন্স মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস পুরস্কার পাচ্ছেন আতাউর রহমান (হোম গার্ড) ও স্বপ্না দত্ত (মারাক) (মহিলা হোম গার্ড)।
অনুষ্ঠানে ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসে ও ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে যে সমস্ত পুলিশ অফিসার ও পুলিশ কর্মীগণ ভারতের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল ও অন্যান্য পুলিশ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য। আজ অনুষ্ঠানে পুরস্কারগুলি তুলে দেওয়া হয় এসআই দেবজিৎ ভট্ট াচার্য, সুবেদার রাখাল চন্দ্র নাথ, সুবেদার ঠাকুরচান দাস, এসআই মাধবী দাস, এসআই সঞ্চিতা নাথ, নায়েক পূর্ণিমা দেববর্মা, কনস্টেবল অর্পণা রাণী দাসের হাতে। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, টিটিএএডিসি এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভারতীয়ম অনুষ্ঠিত হয়।