দুর্গাপুর, ২১ জানুয়ারি (হি. স.) :”শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিতে মানিক, সুবিরেশ, পার্থ যুক্ত আছে তাই নয়, যেভাবে লাল চুল কানে দুল, তার নাম যুবা তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে কটহ্যান্ড গ্রেফতার করা হয়েছে। তাতে এটাই প্রমান করে, সরাসরি তৃণমূলের ভাইপো রেকেট যুক্ত আছে।” শনিবার দুর্গাপুরে কার্যকারিনী বৈঠকের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এভাবেই তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তাই নয়, কুন্তলের সাফাই নিয়ে তিনি বলেন,” বাইরে নিয়ে গিয়ে জেলের পরিবেশেই সত্যি কথা বলবে।”
প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে দুর্গাপুরে রাজ্য কার্যকারিনী বৈঠক শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির। আগামী লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দলের রনকৌশল তৈরী করা ও সংগঠনকে মজবুত করায় কার্যকারিনীর মুল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে। শনিবার সংগঠনের সমস্ত রাজ্য স্তরের কার্যকর্তার পাশাপাশি, জেলাস্তরে বিভিন্ন মোর্চার সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন সকালে দলের বিভিন্ন বিধায়ক সাংসদ, মন্ত্রীগন শহরের বেশ কয়েকটি মন্দিরে পুজো দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসূচী পালন করেন। বৈঠকের প্রথম পর্যায়ের পর সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিজেপি বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন তিনি বৈঠকে আসা কিছু প্রস্তাব জানিয়ে বলেন,” গত কয়েকবছর ও বিধানসভা ভোট পরবর্তি হিংসা ৩০০ কর্মী, কার্যকর্তা খুন হয়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া। সেসব স্মরণ করা হয়েছে। সঙ্কল্প নেওয়া হয়েছে, ভোট পরবর্তি হিংসায় আক্রান্তের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে শাস্তি সুনিশ্চিত করা। আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনায় ৩৪ শতাংশ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জেতা, চপ্পল পরা লাঠিধারি ক্যাডারদের ভোট লুঠ প্রচুর মানুষ শহিদ হয়েছে। তাই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবাধ ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে আদালতের পর্যবেক্ষনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়নে নির্বাচন করার দাবী রাখা হয়েছে।” গত ২১ সালের নির্বাচনের পর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। নারি নির্যাগন, লাভ জেহাদ, ধর্মান্তকরন, বোমা উদ্ধার বেড়েছে।” তিনি আরও বলেন,” সরকারি মিড ডে মিল এসএসটি কর্পোরেশনের খাতের টাকায় সাগরদীঘি ও হাসিমারায় রাজনৈতিক সভা করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীকে লাগামহীনভাবে আক্রমন করা হয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কথাবার্তায় আমরা হতাশ।”
তিনি আরও বলেন,” রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশকারিদের ঢুকিয়ে এরাজ্যে ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করেছেন। তাতে নিজের ভোট ব্যাঙ্ক বাড়িয়েছে ৩০-৪০ বছর ক্ষমতা থাকতে চাইছেন। যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে চিন্তার বিষয়।” একইসঙ্গে বিএসএফকে ৭২ টি জায়গায় ক্যাম্প করার জন্য জমি দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ৯ টি জেলায় জেএমবি, রোহিঙ্গাদের সাপ্লাই লাইন করেছেন। যা সারা ভারতবর্ষের কাছে উদ্বেগের বিষয়। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।” তিনি আরও বলেন,” এরাজ্যে ভুয়ো জবকার্ড প্রচুর পাওয়া গেছে। প্রায় ৭০ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল হয়েছে। রাজ্যের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে জনরোষ তৈরী হয়েছে। এই জনরোষে বিজেপি একমত।” বিচারপতির বিরুদ্ধে পোস্টার, হাইকোর্টে গন্ডগোল প্রসঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেন,” এরাজ্যে আক্রান্ত বিচার ব্যাবস্থা । মানুষ আতঙ্কিত। হাইকোর্টের মধ্যে তৃণমূল আশ্রিত হার্মাদ সৃষ্টি হয়েছে।”
নাওসাদ সিদ্দিকির ওপর আক্রমনের ঘটনায় উৎকন্ঠা প্রকাশ করে শুভেন্দুবাবু বলেন,” আইএসএফ তৃণমুলের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপির বিরোধিতা করে। আগে তাদের ঠিক করতে হবে, তারা তৃণমূলকে তাড়াতে চাইছে কি না।” তিনি বলেন,” বগটুইকান্ডে যেভাবে পুড়িয়ে মারা হল। আমরা সেখানের বুথে ১৩ টা ভোট পেয়েছি। অথচ ঘটনার পর আমরা প্রথম ৭০ জন বিধায়ককে নিয়ে গেছি। পুরুলিয়ার তপন কান্দু আমাদের কর্মী ছিল না। তবুও আমরা গিয়েছিলাম।” এসএসসি কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়েছে তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। এদিন কুন্তল ঘোষের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” ডাকাত কুন্তলের ক্ষেত্রে কাজ করল না রক্ষা কবচ্, অন্যক্ষেত্রেও কাজ করবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিতে মানিক, সুবিরেশ, পার্থরা যুক্ত আছে শুধু তাই নয়। যেভাবে লাল চুল কানে দুল, তার নাম যুবা তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে কটহ্যান্ড গ্রেফতার করা হয়েছে। তাতে এটাই প্রমান করে, সরাসরি তৃণমূলের ভাইপো রেকেট যুক্ত আছে।”
কুন্তলের রাজনৈতিক যোগ না রাখার সাফাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” ২৫ -৭৫ শতাংশর অনুপাতে ভাইপোকে ডাকাত কুন্তলরা টাকা তুলে দিয়েছে। তাদের ভাইপো রেকেট শিখিয়ে দিয়েছে, সেটাই বলছে। তাদের শেখানো না বললে, পার্থকে বেলের মোরোব্বা, চোর কেষ্টকে অষ্টমিতে লুচি, দশমীতে পাঁঠার মাংস খাওয়ানো যেমন চোর নয় আদালতে চুল দাড়ি কামিয়ে জামাই নিয়ে যাওয়া হয়। তেমনই ডাকাত কুন্তুল জেলে মোবাইল ব্যাবহার, কম্বল, খাটের বিছানা, গরম জল পাওয়ার জন্য বলছে। তাই এদের বাইরে নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক লক আপে, জেলের পরিবেশেই সত্যি কথা বলে দেবে।”