দুর্গাপুর, ১৬ জানুয়ারি (হি. স.) স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। তাই নিয়ে সহকারী শিক্ষকের ফেসবুক পোষ্ট। আর পোষ্ট চাউর হতেই স্কুল গেটের সামনে অবিভাবক ও গ্রামবাসীদের তুমুল বিক্ষোভ। সোমবার ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল বিশাল পুলিশবাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স।
ঘটনায় জানা গেছে, ওই স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক শক্তিপদ পাঠক একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তাতে উল্লেখ করে বলেন,’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্টাফ রুম থেকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন। আমি নাকি অযোগ্য এক শিক্ষক।’ ওই পোস্ট মুহুর্তে ভাইরাল হতেই বিপত্তি বাঁধে। কাতারে কাতারে জেমুয়া গ্রামের বাসিন্দারা চলে আসে স্কুল গেটের সামনে। শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। খবর পেয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক শক্তিপদ পাঠকের মেয়ে রিয়া পাঠক স্কুলের গেটের সামনে পৌঁছায়। তাঁর অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ভেতরে ঢুকতে বাঁধা দেয়। আর তাতে যেন যজ্ঞে ঘি ঢালার মত পরিস্থিতি হয়ে ওঠে। ঘটনায় আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বাবার সাথে কথা বলতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিযোগকারী শিক্ষকের মেয়ে রিয়া পাঠক।
তিনি বলেন,” স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী। বাবাকে হেনস্থার খবর পেয়ে ছুটে এসেছি কি ঘটনা হয়েছে। স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কপন স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হল না জানতে চাই?” স্কুলের সামনে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে নিউটাউনশিপ ও বিধাননগর ফাঁড়ির পুলিশ। নামে কমব্যাট ফোর্স। উত্তেজিত জনতাকে গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে স্কুলের গেটে ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ,” এভাবে একজন শিক্ষককে কেন হেনস্থা করা হল? অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করতে হবে।” এদিকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আটকে থাকে ভেতরে। যদিও পুলিশের তৎপরতায় ছাত্র ছাত্রীদের বের করে আনা হয়। কিন্তু স্কুল ছুটির পরও উত্তেজিত গ্রামবাসিরা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অপসারনের দাবিতে স্কুল গেটে বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। স্কুল ছুটির পরও কার্যত আটকে থাকেন জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের শিক্ষক শিক্ষিকারা। ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপিঠ স্কুল চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামানো হয়। নামানো হয় কমব্যাকক্ট ফোর্স।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের দুর্গাপুর জোনের এসিপি তথাগত পান্ডের নেতৃত্তে শুরু হয় গোটা গ্রামে পুলিশি টহল। ঘটনাস্থলে আসেন লাউদোহার যুগ্ম বিডিও। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জইনুল হক যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,” নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মিটে গেছে। স্কুল আমাদের সংসার। একই সংসারে এরকম একটু হতেই পারে। নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন,” একসময় স্কুলের আশপাশে মদ বিক্রি হত। আমি আসার পর সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। তাই আমার ওপর আক্রোশ।”
অভিযোগকারী শিক্ষক শক্তিপদ পাঠক জানান, “বিষয়টি তার কাছে অনাকাঙ্খিত ছিল।” পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এরপর যুগ্ম বিডিও প্রধান শিক্ষক ও অভিযোগকারী শিক্ষককে নিয়ে আলোচনায় বসেন। এবং আলোচনার পর বিক্ষোভ উঠে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

