আগরতলা, ১২ জানুয়ারী(হি. স.) : ত্রিপুরায় নির্বাচনে অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই, আগামী বিধানসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করবই, ত্রিপুরা সফরে এসে আজ সাংবাদিক সম্মেলনে দৃঢ়তার সাথে আশ্বস্ত করলেন ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে পরিস্থিতি রয়েছে। এই পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য নির্বাচনের সাথে যুক্ত সকলকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সাথে তিনি যোগ করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্য খোঁজা অনেকের স্বভাব। তবে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যই সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য।
এদিন তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গতকাল সমস্ত রাজনৈতিক দল, জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার, নির্বাচনী আধিকারিক, পুলিশের মহা নির্দেশক, মুখ্য সচিব সহ অন্যান্যদের সাথে বৈঠক করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হয়েছে। তাতে, ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের সমস্ত আয়োজন সঠিকভাবে করা হয়েছে বলেই জানা গেছে। তাঁর কথায়, কমিশন ত্রিপুরায় অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। হিংসামুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সমস্ত প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাইছে কমিশন।
তাঁর বক্তব্য, দেশে অধিকাংশ রাজ্যেই নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের প্রবণতা কমেছে। ত্রিপুরায় ওই পরিস্থিতি পরিবর্তনে জোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, নির্বাচনের সাথে যুক্ত সকলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোটারদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা হলে তাঁদের জবাব দিতে হবে। প্রয়োজনে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কড়া বার্তা, প্রথমে আসলে প্রথম সুবিধা মিলবে, এই পদ্ধতিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সুনিশ্চিত করা হবে।
তাঁর দাবি, সমস্ত ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ইভিএম সংরক্ষণেও কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি, সমস্ত চেকপোস্ট এবং নাকা পয়েন্টেও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্বে থাকবেন অবজারভারগণ। প্রার্থী এবং পুলিং ও কাউন্টিং এজেন্টদের নিরাপত্তা জেলা শাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারগণ সুনিশ্চিত করবেন।
এদিন তিনি জানান, নির্বাচনকে ঘিরে অভিযোগ জানানোর জন্য মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও ইভিজিল অ্যাপস-র মাধ্যমেও অভিযোগ জানানো যাবে। তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে ওয়েব কাস্টিং-র ব্যবস্থা থাকবে। এক্ষেত্রে সমস্ত ক্যামেরা সচল থাকে, নির্বাচনী আধিকারিকদের তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, সমস্ত বুথে একজন করে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন। তিনি কেন্দ্রীয় কর্মচারী হবেন।
তাঁর সাফ কথা, নির্বাচনে সরব প্রচারের সময়সীমা সমাপ্ত হওয়ার পর কোন ধরণের সভা কিংবা প্রচার করা যাবে না। এমনকি নির্বাচনে বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকে এমসিএমসি কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। তাঁর দাবি, ভুয়ো খবরের সত্যতা যাচাইয়ে টিম গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে কমিশন প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, মাদক পাচার, বেআইনি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর নজরদারি চালানো হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মূল পান্ডাকে জালে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাঁর দাবি, আগামী নির্বাচনে মহিলা, দিব্যঙ্গন এবং নতুন ভোটারদের সশক্তিকরণের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিন তিনি সাফ জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিস্থিতি রয়েছে। অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর আশ্বাস, শান্তিপূর্ণভাবেই ত্রিপুরায় ভোট উত্সব পালিত হবে। ভোটারদের পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সাথে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়ানো অনেকের স্বভাব। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই কমিশনের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে কোন গাফিলতি এবং অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না।