ত্রিপুরায় বিজেপিকে হারানোই প্রধান লক্ষ্য, কংগ্রেস ও তিপরা মথার সাথে জোটে রাজি সিপিএম

আগরতলা, ১১ জানুয়ারী(হি. স.) : ত্রিপুরায় বিজেপিকে হারাতে কার্যত নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত সিপিএম। কংগ্রেসের সাথে নীতিগত ফারাক থাকা সত্বেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে উপযুক্ত নির্বাচনী কৌশল অবলম্বনে জোটের প্রশ্নে সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে কংগ্রেস, তিপরা মথা সহ সমস্ত বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে আসন ভাগাভাগি করবে সিপিএম। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে একথা স্পষ্ট জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

তাঁর কথায়, অভিন্ন কর্মসূচী এবং ইস্তেহারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতা ভুল। কিন্তু, বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট ভাগাভাগি আটকাতে আসন রফা সঠিক। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর অকপট স্বীকারোক্তি, বিজেপির বিরুদ্ধে জোটের প্রশ্নে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জোট সম্মানজনক ভাবে করার প্রচেষ্টা চলবে।

এদিন সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, তেইশের বিধানসভা নির্বাচন ত্রিপুরার পাশাপাশি সারা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিজেপি-কে হারানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই, ত্রিপুরায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিজেপিকে হারানো প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়েছে। সেই বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সমস্ত অসাম্প্রদায়িক দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্রিপুরার জনগণের স্বার্থেই সিপিএম ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে, জোটের রণকৌশল স্থির করতে রাজ্য কমিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গেও সিপিএম ও কংগ্রেস জোট করেছে। কিন্তু, ওই জোটের সমালোচনায় খোদ সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি মুখর হয়েছিল। এ-বিষয়ে সীতারাম ইয়েচুরির সাফ কথা, পশ্চিমবঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সমালোচনা করেনি। কিন্তু, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি করেছে। সেটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তাঁর মতে, অভিন্ন কর্মসূচী এবং ইস্তেহার ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি ভুল। কিন্তু, বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি আটকাতে আসন রফা সঠিক। ত্রিপুরায় সিপিএম সেই পথেই হাটবে।

এদিন তিনি মনে করিয়ে দেন, সিপিএমের ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে বিজেপিকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে দলের এককভাবে শক্তি বৃদ্ধি, বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং উপযুক্ত নির্বাচনী কৌশল অবলম্বনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাঁর কথায়, বিজেপি বিরোধী ভোট একত্রিত করতে ওই পথে হাঁটা খুবই জরুরী। কারণ, সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে কঠিন লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েই মোকাবিলা করতে হবে।

সিপিএম এখন গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের দাবির মধ্যেও অসাংবিধানিক কিছু দেখেছে না। বরং, তিপরা মথা-কে কাছে টানতে তাঁদের ওই দাবি সাংবিধানিক বলেই মনে করছে। সীতারামের কথায়, তিপরা মথা গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের প্রশ্নে সাংবিধানিক সমাধান চেয়েছে। একইভাবে সিপিএম এডিসি-তে অধিক ক্ষমতায়নে সংবিধান সংশোধনে সোচ্চার হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত বিল সংসদে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে রয়েছে।

তবে, বিজেপি-কে হারাতে শুধু গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের দাবির সাথে আপোষে থেমে থাকবে না সিপিএম। জরুরী অবস্থার জন্য দায়ী কংগ্রেসের সাথেও হাত মেলাতে প্রস্তুত তাঁরা। সীতারামের সাফ কথা, সিপিএম বিজেপিকে হারানো অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি সমস্ত অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে, এককভাবে সমস্ত অবিজেপি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেবে।

এ-বিষয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে অবিজেপি দলের সাথে আসন রফায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে, সম্মানজনকভাবে আসন রফার প্রচেষ্টা চলবে।