শিলচর (অসম), ২ জানুয়ারি (হি.স.) : গত শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দিল্লিতে ক্যাবিনেট বৈঠকে বরাক উপত্যকা সহ অসমের বিভিন্ন জেলার সীমানা সংশোধন এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-এর যুবফ্রন্ট (বিডিএফ-ওয়াইএফ)।
আজ সোমবার এক প্রেস বার্তায় বরাক ডেমোক্র্যাটিক যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন, মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে কাটিগড়ার ১৭টি রাজস্ব গ্রামকে হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে বদরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাকে কাছাড় জেলার সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে সরকারের তরফে আইন-শৃঙ্খলা সহ যোগাযোগ ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা বলা হয়েছে। কল্পার্ণব বলেন, এই যুক্তি যে অসার বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে তা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, কাটিগড়ার যে বারোটি রাজস্ব গ্রাম করিমগঞ্জের সাথে যুক্ত করা হয়েছে তাতে একমাত্র টুকরগ্রাম ছাড়া বাকি সবকয়টি গ্রামের জনগণকে প্রশাসনিক কাজের জন্য প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে করিমগঞ্জ জেলা সদরে যেতে হবে। কারণ বরাক নদী পেরিয়ে করিমগঞ্জ যাওয়ার তাঁদের কোনও সরাসরি ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে পূর্ব কাটিগড়ার যে গ্রামগুলিকে হাইলাকান্দি জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাঁরাও বরাক নদী পেরিয়ে সরাসরি জেলা সদরে যেতে পারবেন না। তার জন্য সেই বদরপুরের গ্যামন সেতু পেরিয়ে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে যেখানে শিলচরের সাথে তাঁদের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার।
করিমগঞ্জের সাথে রেলশহর বদরপুরের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। এবার নতুন জেলাসদর শিলচরের সাথে তাঁদের দূরত্ব হবে ৩৪ কিলোমিটার। ফলে জনগণের সময়, অর্থের অপচয়, ভোগান্তি সবকিছুই বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা ‘গ্রাউন্ড রিয়ালিটি’কে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন এবং তাই যোগাযোগ ও প্রশাসনিক যে সুবিধার কথা বলা হচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই।
যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক আরও বলেন, একইভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন বিধায়ক শহিদুল আলম চৌধুরী কাটিগড়া সার্কলকে হাইলাকান্দির সাথে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু কাটিগড়াবাসী একবাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেন, গুগল ম্যাপ দেখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিডিএফ। কারণ এতে বরাকবাসী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, একটা মহলের ধারণা, একধরনের সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব নিয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কল্পার্ণব বলেন, গণতন্ত্রে জনগণই শেষ কথা। তাই তাঁদের মতামত ও সুবিধা-অসুবিধাকে তোয়াক্কা না করে এ ধরনের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিডিএফ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।