ত্রিপুরায় বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ জনজাতি কল্যাণে ব্যয় হয় : বিজেপি

আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরায় বাজেটে বরাদ্দ অর্থের ৪০ শতাংশ জনজাতিদের কল্যাণে খরচ করা হচ্ছে। টিটিএএডিসি-কে অর্থ প্রদানে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগের খন্ডন করে ত্রিপুরার অর্থ মন্ত্রি তথা উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মার দাবি, রাজ্য সরকারকে অযথা কাঠগড়ায় দাঁড় করা হচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার থেকে এডিসি প্রশাসন ১৮৮১ কোটি টাকা পেয়েছে। অথচ, ৭৭৬ কোটি টাকা খরচের হিসেবে বিরাট ফাঁক পাওয়া গেছে।

আজ জনজাতি মোর্চার উদ্যোগে রাজভবন অভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশাল মিছিল নিয়ে জনজাতি মোর্চা রাজ্যপালের কাছে এডিসি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে মেমোরেন্ডম দিয়েছে। ওই মিছিলে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, বিজেপি সহসভাপতি পাতাল কন্যা জমাতিয়া সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে সার্কিট হাউসে গিয়ে জনসভায় যোগ দিয়েছে। মিছিল থেকে এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের কাছে মেমোরেন্ডম জমা দিতে গেছেন।

বর্তমানে এডিসির শাসন ক্ষমতায় রয়েছে তিপরা মথা। রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মনের নেতৃত্বে তিপরা মথা এডিসি দখল করেছে। তিপরা মথার অভিযোগ, ত্রিপুরা সরকার এডিসি প্রশাসনের সাথে আর্থিক বঞ্চনা করছে। ফলে, জনজাতিদের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

আজ বিজেপি জনজাতি মোর্চার উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থ মন্ত্রী তিপরা মথার সমস্ত অভিযোগের খন্ডন করেছেন। সাথে তিনি এডিসি প্রশাসনে দুর্নীতি এবং অনিয়মের কেচ্ছা তুলে ধরে তিপরা মথাকে তুলোধুনা করেছেন। তাঁর কথায়, প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিন থেকেই তিপরা মথা ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ প্রদানে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ আনছে।

তাঁর বক্তব্য, বামেদের শাসনকালে এডিসি-কে বছরে ১১৫৫ কোটি টাকা দেওয়া হতো। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সেই অর্থ বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৮১ কোটি টাকা। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, এডিসি-কে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৭৬ কোটি টাকা খরচের হিসেবে বিরত ফাঁক রয়েছে। কোথায় ওই টাকা খরচ হয়েছে, টার হিসেব এখনো দিতে পারেনি এডিসি প্রশাসন।

তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় বাজেটে বরাদ্দ অর্থের ৪০ শতাংশ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়নে খরচ করা হচ্ছে। এডিসি-র দাবি, প্রাপ্য অর্থ প্রদান করছে না ত্রিপুরা সরকার। অথচ, ২৬ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ৪২ থেকে ৪৩ শতাংশ অর্থ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বহুতল ভবন, রাস্তা, স্কুল এবং অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ করা হচ্ছে, দাবি করেন তিনি।

সাথে তিনি যোগ করেন, গ্রামোন্নয়ন দফতর বাজেট বরাদ্দের ৬৫ শতাংশ অর্থ অনুন্নত এলাকায় উন্নয়নে খরচ করছে। তাঁর কটাক্ষ, গত দেড় বছরে সাফল্য অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী তিপরা মথা এবং এডিসি প্রশাসনকে উপদেশ দেন, রাজ দরবার থেকে বেরিয়ে জনকল্যাণে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করুক। তাঁর কটাক্ষ, রাজবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন এবং যোগদান ছাড়া তাঁদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা দাবি করেন, ত্রিপুরায় একমাত্র বিজেপি সরকার জনজাতি কল্যাণে কাজ করেছে। তাই, বিজেপির কাজে জনজাতিরা সন্তুষ্ট। কর্মীদের প্রতি তাঁর আবেদন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ত্রিপুরা সরকারের জনকল্যাণমুখি কাজের বিবরণ মানুষের কাছে পৌছে দিন।

বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, দলের প্রদেশ সভাপতি পদে দায়িত্ব নিয়েই সংকল্প নিয়েছি, বিজেপি ৬০টি বিধানসভা আসনেই বিজেপি জয়ী হবে। কিন্ত, কিছুটা সন্দেহ ছিল মনে। তবে, সমস্ত চিন্তা দূর হয়ে গেছে। জনজাতি মোর্চার মিছিল দেখে নিশ্চিত, তিপরাল্যান্ড কিংবা গ্রেটার তিপরাল্যান্ড নয়, বিজেপির উন্নয়নের শ্লোগানেই আস্থা রয়েছে মানুষের।