দুর্গাপুর, ২৭ ডিসেম্বর (হি. স.) এগিয়ে চলছে সমাজ। প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল কায়দায় কারচুপি। চাষীদের কাছে ধান কেনার সময় রিমোট মাধ্যমে ওজনযন্ত্রে কারচুপির অভিযোগ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চাষীদের নজর ধরা পড়ে যায় প্রতারক ধান ব্যাবসায়ী। আর ধরা পড়তেই গাছে বেঁধে গণধোলাই দিল গ্রামবাসীরা। নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার বৃন্দাবনপুর গ্রামে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে চার ফঁড়েকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের আদালতে তোলা বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন।
ঘটনায় জানা গেছে, সোমবার বিকালে বৃন্দাবনপুর গ্রামের এক চাষির বাড়িতে ধান কিনতে এসেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের পারাজ এলাকার কয়েকজন ফঁড়ে। কিন্তু প্রতিটি ধানের বস্তাতেই ওজন কম হওয়ায় সন্দেহ হয় চাষীদের। প্রতারিত চাষী বাবুলাল হাঁসদা সন্দেহ হওয়ায় ওই ব্যক্তিদের তল্লাশি করতেই পুরো বিষয়টি সামনে আসে। বাবুলালবাবুর দাবি, “তাঁর হিসাব মতো একটি বস্তাতে কম করে ৬০ কেজি ধান হয়। অথচ ওজন করলেই তা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ কেজির মধ্যে। ডিসপ্লে বোর্ডে রিমোট কন্ট্রোলে ধানের ওজন ১০-১২ কেজি কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। তাতে ওজন দেখে তাঁর সন্দেহ জাগে। তারপরই ধান কেনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের ওজনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।” তারপরই উত্তেজিত গ্রামের বাসিন্দারা দুজন ফঁড়েকে একটি গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। চলে গণধোলাই।
স্থানীয়দের দাবি, “ধৃত এক জনের জ্যাকেটের ভিতরে ছোট একটি রিমোট যন্ত্র রয়েছে। যার দ্বারা ওজন যন্ত্রে কারচুপি করা হচ্ছিল। বস্তায় ১০ থেকে ১৫ কেজি করে ওজন কমানো হচ্ছিল। এভাবেই চাষীদের ঠকানো হচ্ছিল। তাই তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁকসা থানার পুলিশ। কিন্তু গ্রামবাসীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই দুজনকে বাঁধন খোলা হয়। পুলিশ দুজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে জড়িত আরও দুজন সহ মোট চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাশাপাশি ধান বোঝাই একটি ছোট ট্রাক, ওজনের সামগ্রী ও ব্যাবহৃত রিমোট আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, ধৃতদের নাম বাসুদেব বাগদি ও শেখ চন্দন। এছাড়ও আরও দুজন রয়েছে। মঙ্গলবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন। উল্লেখ্য, গত কয়েকবছর ধরে এরকম একটি চক্র গ্রামীন এলাকায় চাষীদের কাছে প্রতারণা করে চলেছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে পানাগড় গ্রামে একই কায়দায় কারচুপি করার সময় সরাসরি ধরে পড়ে চাষীদের হাতে। ধৃতদের খুঁটিতে বেঁধে গনধোলাইও পড়ে। তারপর এবছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ধৃতরা সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন তারা রিমোটের সাহায্যে ওজনে কারচুপি করছিল। তবে এহেন প্রতারণার খবর চাউর হতে শোরগোল পড়ে যায় কৃষি অঞ্চলে।
কাঁকসা থানার পুলিশ জানিয়েছে, “অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”