আগরতলা, ১৮ ডিসেম্বর (হি. স.) : ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার হওয়ার পূর্বে বিশাল মহড়া দিতে ময়দানে নেমেছে ত্রিপুরার শাসক দল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ভোটের পালে ঝড় উঠবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে ত্রিপুরা জুড়ে আলাদা উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাতারে কাতারে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত থাকার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী আগরতলা বিমান বন্দরে এসে পৌছাবেন। এরপর তিনি জনসভায় অংশ নেবেন। আজ তিনি ত্রিপুরায় একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় মোট ৭১ হাজার ৭০০ জনের সমাগমের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় লোকসমাগমে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিজেপির প্রদেশ শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। লোকসমাগমের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার জন্য ৬০টি বিধানসভার কেন্দ্রের জন্য জেলা ভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছিল। সদর শহরের অধীনে বিধায়ক সুরজিত দত্ত, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার এবং অসীম ভট্টাচার্য লোকসমাগমের ব্যবস্থা করছেন। সদর গ্রামীণের অধীনে ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন মন্ত্রী রতনলাল নাথ, সজল আচার্য এবং অসিত রায়কে। সিপাহিজলা জেলা দক্ষিণে মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, মৌসুমী দাস এবং গৌরাঙ্গ ভৌমিক জনসমাগনের ব্যবস্থা করছেন। এদিকে, সিপাহিজলা জেলা উত্তরে বিজেপি প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক কিশোর বর্মণ, জসিম উদ্দিন এবং দেবব্রত ভট্টাচার্য জনসমাগমের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
গোমতি জেলায় মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, রতন ঘোষ ও অভিষেক দেবরায়, দক্ষিণ জেলায় বিজেপি প্রদেশ সাধারণ সম্পাদিকা পাপিয়া দত্ত, বিধায়ক শংকর রায় ও বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, খোয়াই জেলায় বিজেপি প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক অমিত রক্ষিত, বিধানসভায় মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় ও বিধায়ক পিনাকী দাসচৌধুরী, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, তপন ভট্টাচার্য ও বিধায়িকা মালিনা দেবনাথ, উনকোটি জেলায় মন্ত্রী ভগবান দাস, বিজেপি প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক টিংকু রায় ও বিধায়ক সুধাংশু দাস এবং ধলাই জেলায় মন্ত্রী মনোজকান্তি দেবরায়, বিধায়িকা স্বপ্না দাস পাল, তাপস মজুমদার ও ভূমিকা নন্দা রিয়াং-এর জনসমাগণের আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছেন।
এদিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা দেখে অনেকেই আন্দাজ করতে পারছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পুণরায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন হচ্ছে শাসক দলের। আজ জনৈক কর্মীকে সারা শরীরে বিজেপির পতাকার রঙে সাজতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তিনি নিজের শরীরে বার্তা একেছেন। তিনি জানান, ভোর চারটা থেকে সারা শরীরে রঙ লাগানোর কাজে ন্যস্ত হয়েছিলেন। প্রায় তিন ঘন্টার টানা চেষ্টায় তিনি বিজেপির পতাকার রঙে নিজেকে রাঙাতে পেরেছেন। তাঁকে দেখে কর্মীরা দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বামফ্রন্ট এবং তিপরা মথা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভা করেছে। তাদের ওই জনসভাকে আজ কার্যত বিজেপি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বিজেপি ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে ঘিরে বিশাল জনঢল জানান দিচ্ছে, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হয়ে গেছে।
আজ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইণ আর্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক, মুখ্যসচিব, পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত থাকবেন। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় সরাসরি স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে পৌঁছবে। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর থেকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান পর্যন্ত ১৬টি সাংস্কৃতিক দল প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে, তাঁর সফরকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের ১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৯টি আবাস এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-শহর প্রকল্পের ৫৪ হাজার ৫২৬টি আবাসের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন। এর পর তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট এবং আগরতলা ডেন্টাল কলেজের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অন্তর্গত ৩২টি সড়কের (দৈর্ঘ্য ২৩২ কিলোমিটার) এবং ১১২টি রোড প্রজেক্টের (দের্ঘ্য ৫৪২ কিলোমিটার) ভার্চুয়ালি শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।