BRAKING NEWS

 কিষান ক্রেডিট কার্ডে রাজ্যে ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৫৮৮ জন কৃষককে ১,৩৮৬ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ ডিসেম্বর৷৷  রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর গত সাড়ে চার বছরে কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৫৮৮ জন কৃষককে কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে৷ কৃষকদের ঋণ প্রদান করা হয়েছে মোট ১,৩৮৬ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় দপ্তরের সাফল্যের খতিয়ান বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে এ সংবাদ জানান৷ তিনি জানান, ২০১৮ সালে রাজ্যে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়ন এবং রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ তিনি জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে রবি মরশুম থেকেই রাজ্যে প্রথমবারের মত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন৷ এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৮-১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন ধান ৭০ হাজার ২৩ জন কৃষকের কাছ থেকে নূন্যতম সহায়ক মূল্যে কেনা হয়েছে৷ তাতে মোট ২৪৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা কৃষকদের একাউন্টে সরাসরি প্রদান করা হয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী মরশুম থেকে ২০ টাকা ৪০ পয়সা প্রতি কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে৷তিনি জানান, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ যেমন, খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শস্য বৈচিত্রে্যর মাধ্যমে অধিক অর্থকরী ফসল চাষ, উন্নতমানের বীজ বিতরণ, পর্যাপ্ত রাসায়নিক ও জৈব সারের যোগান, জলসেচ ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ, জৈব চাষের এলাকা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক চাষে গুরুত্ব আরোপ, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশন গঠন, প্রতিটি কৃষি মহকুমায় ১টি করে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র স্থাপন, কৃষি প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি, প্রধানমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনা কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে অর্থ প্রদান, কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, রাজ্যের গ্রামীণ বাজারগুলির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ, উৎপাদিত ফসলের সঠিক বাজারজাতকরণ, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে জমিতে রাসায়নিক এবং জৈবসার প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে রাজ্যের কৃষকদের গড় মাসিক আয় ১৩,৫৯০ টাকা করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার একটি ত্রি-বর্ষীয় পরিকল্পনা (২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩) গ্রহণ করে৷
সচিব জানান, রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য দেওয়া সরকারী ভুর্তুকীর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১ শতাংশ৷ ২০১৭-১৮ সালে যেখানে এই বরাদ্দ ছিল ২৮ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকায়৷ তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্যে মোট ২১ হাজার হেক্টর এলাকায় জৈব চাষ করা হচ্ছে৷যা ২০১৭-১৮ সালে ছিল মাত্র ২ হাজার হেক্টর৷ শুধু তাই নয় উৎপাদিত জৈব ফসল অধিক দামে বহির্রাজ্যে বাজারজাতকরণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ মেট্রিকটন সুগন্ধি চাল, ১৯ মেট্রিকটন আদা, সাড়ে ১২ মেট্রিকটন হলুদ এবং সাড়ে ৫৬ মেট্রিকটন আনারস বহিরাজ্যে রপ্তানি করা হয়েছে৷
তিনি জানান, ২০১৯-২০ সালে কোভিড অতিমারির প্রভাব সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগে কৃষকদের স্বার্থে মোট ৪৯ হাজার মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক সার কৃষকদের মধ্যে সময় মত বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে দপ্তর এবং অতিমারির সময়েও রাজ্যে কোথাও সারের ঘাটতি ছিল না৷ সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, ২০১৯-২০ সাল থেকেই সরকার ধান চাষে তরল জৈব সার ব্যবহার শুরু করেছে৷ রাজ্য সরকার হাইব্রিড ধানের অধিক ফলনের জন্য গত দুই মরশুমে মোট ৬০ হাজার লিটার তরল এনপিকে জৈব সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছে৷ এছাড়াও রাজ্যে একটি জৈব পণ্য পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সচিব জানান, আমাদের রাজ্যে বর্তমানে ৫৮টি ব্লকের মধ্যে ৪১টি রকে ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশন গঠনের কাজ চলছে৷ এখন পর্যন্ত ২৭টি এফপিও-এর রেজিস্ট্রিকরণ হয়েছে৷ এই এফপিওগুলি সুগন্ধি জাতের ধান চাষ, আনারসের উৎপাদন এবং বিপন্ন, মধু উৎপাদন এবং বিপন্ন, বিভিন্ন মশলার চাষ এবং বাজারজাতকরণ, মাশরুম চাষ ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে৷ তিনি জানান, রাজ্যে মোট ৫৫৪টি (২১টি এগ্রি প্রোডিউস মার্কেট, ৬৩টি হোলসেল বাজার ও ৪৭০টি গ্রামীণ বাজার) বিভিন্ন ধরণের বাজার আছে৷গত সাড়ে চার বছরে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর মোট ৬৬টি বাজারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷
এর মধ্যে আরআইডিএফ প্রকল্পে ৫৫টি গ্রামীণ বাজার এবং ১১টি কৃষি বিপন্ন বাজার উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্যের ৭টি কৃষি বিপন্ন বাজারকে ই-এনএএম পোর্টাল-এ সংযুক্তিকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার প্রজেক্ট জমা দেওয়া হয়েছে৷কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে৷ সচিব জানান, রাজ্য সরকার কৃষকদের কৃষি কাজে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি কৃষি মহকুমায় একটি করে মোট ৩৮টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এখন পর্যন্ত রাজ্যে ২৯টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র চালু করা হয়েছে৷ তিনি জানান, কৃষকদের স্বার্থে সরকার রাজ্যের অধিকাংশ ধান চাষীদের বীমার আওতায় আনতে ২০২০-২১ সালে ’’মুখ্যমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনা’’ চালু করে৷
ফলে আগে যেখানে কানি প্রতি কৃষকের প্রিমিয়াম দিতে হত ২২০ টাকা সেখানে বর্তমানে কৃষকগণ কানি প্রতি মাত্র ১০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে বীমা করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ রাজ্য সরকার কানি প্রতি ২১০ টাকা করে প্রিমিয়ামের টাকা বহন করছে৷ গত সাড়ে চার বছরে মোট ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৬৯ জন কৃষককে বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে৷ এর ফলে ৮০ হাজার ৫৪১ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোট ৫ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ পেয়েছেন৷ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন কৃষকের একাউন্টে দ্বাদশ কিস্তি পর্যন্ত সরাসরি ৫০৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি কর্মকান্ড এবং উন্নত কৃষি পরিষেবার সুফল কৃষকদের কাছে সরাসরি ও দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যের ৩৮টি ব্লকে একটি করে মোট ৩৮টি কৃষি মহকুমা স্থাপন করা হয়েছে৷ এছাড়াও জোলাইবাড়ি, বি সি নগর, পোয়াংবাড়ি, নলছড় ও বামুটিয়া ব্লকে আরও ৫টি নতুন কৃষি মহকুমা শীঘ্রই চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কৃষি দপ্তরের সচিব সাংবাদিক সম্মেলনে জানান৷ সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *