করিমগঞ্জ (অসম) ২৫ নভেম্বর (হি.স.) : আমাদের ইতিহাস বীর গাঁথা শিক্ষণীয় ইতিহাস অথচ আমরা এতদিন যে ইতিহাস পড়ছি তা শুধু সুলতানরা প্রেয়সীদের বা নিজেদের প্রাচীর প্রাসাদ তৈরি করা আর মিথ্যা গুণ গান । বর্তমান সরকার আমাদের ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনছে । যে ইতিহাসে রামায়ণ মহাভারত থেকে শিবাজী এবং লাচিত সবশেষে নেতাজির বীরগাঁথা লেখা আছে । আমারা সেই ইতিহাস চাই যে ইতিহাস আমাদেরকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিবে, যে ইতিহাস আমাদেরকে সৃষ্টির সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলবে । যে ইতিহাস আমাদেরকে ভ্রাতৃত্বের সন্ধান দেবে । আমরা সেই ইতিহাস চাই। আমরা ফিরে পেতে চাই মোগলদের বিরুদ্ধে সরাইঘাটের যুদ্ধের লাচিত এর ইতিহাস । শুক্রবার বীর যোদ্ধা লাচিত বরফুকন এর ৪০০ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রেসক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন করিমগঞ্জ রবীন্দ্রসদন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ডা শর্মিষ্ঠা খাজাঞ্চি ।
এদিন প্রেসক্লাব করিমগঞ্জ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সূচনা করে প্রেস ক্লাবের সভাপতি মিহির দেবনাথ এর পৌরহিত্যে আয়োজিত আলোচনা সভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শর্মিষ্ঠা খাজাঞ্চি লাচিত জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন । তিনি বলেন, অসমের তথা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন আর ভয়ংকর লড়াই হিন্দুরা লড়েছিল মুঘলদের সঙ্গে ১৬৭১ সালে । যা ইতিহাসে (শরাইঘাটের যুদ্ধ) নামে পরিচিত। আর এই যুদ্ধের নায়ক ছিলেন এক অসম সাহসী অহমিয়া যোদ্ধা লাচিত বরফুকন (”বরফুকন” বলা হত অহম সেনার ”চীফ ফিল্ডমার্শাল” বা সেনাপতিকে)। কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দু উপজাতিদের গৌরবগাঁথা অধ্যায় গুলি স্থান পায়নি ভারতের ইতিহাসে, আমাদের সবার কাছ থেকে এসব লুকিয়ে রাখা হয়েছে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ সাজাতে।
সভাপতি মিহির দেবনাথ বলেন, তৎকালীন ভারতবর্ষ এবং বর্তমান ভারতবর্ষের মধ্যে অনেক তফাৎ । তিনি বলেন, বীর লাচিত এর যুদ্ধ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে চলবে না । কারণ ভারতবর্ষে যে সকল মুসলমান রাজা আক্রমণ করেছিলেন তারা সবাই বিদেশী আমাদের দেশের মুসলমানরা কখনোই বিদেশি মুসলমানদের পক্ষে ছিলেন না যার অনেক প্রমাণও আছে । বীরযোদ্ধা লাচিত বরফুকনের শরাইঘাটের যুদ্ধ প্রসঙ্গে মিহিরবাবু বলেন, নদীবক্ষে অহম সৈন্য ত্রিভুজাকারে ঘিরে রাখায় খাদ্য ও গোলাবারুদের অভাবে হার স্বীকার করে মুঘলরা । তাদের ২১ টি জাহাজ ধ্বংস হয় এবং ৪ হাজার সৈন্য মারা যায়। এডমিরাল মুনাব্বর খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি জাহাজগুলি নিয়ে পালাতে শুরু করে তারা । কিন্তু লাচিত শত শত দ্রুতগামী ছোট নৌকা নিয়ে পিছু ধাওয়া করেন ব্রহ্মপুত্র থেকে মানস নদী পর্যন্ত । শেষে রাম সিং ৭ এপ্রিল ১৬৭১ সালে হেরে গিয়ে বাকি মুঘল সেনা নিয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে আসাম ছাড়েন। মাত্র ২ হাজারের অহম নৌবাহিনীর নিয়ে শুধুমাত্র বীরত্ব আর কৌশলকে সম্মল করে বিশাল ৯ হাজারের মুঘল নৌবাহিনীকে পরাস্ত করেন বীরলাচিত বড়ফুকন।
এদিনের আলোচনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলীতে অংশ নেন ইস্টার্ন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষিকা ঝুমা দাস, তারাকিশোর বনিক, প্রেস ক্লাবের সম্পাদক অরূপ রায় প্রেস ক্লাবের সদস্য শংকর রায় লস্কর, সুদীপ দাস, এস এম জাহির আব্বাস, বিভাস চন্দ্র দাস, সুজয় শ্যাম আজার উদ্দিন, তনুশ্রী রায়, রাজশ্রী দাস । তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইকবাল খান, বাপন নম:শূদ্র, কল্পনা শুক্লবৈদ্য প্রমুখরা ।