করিমগঞ্জ (অসম), ২২ নভেম্বর (হি.স.) : করিমগঞ্জ জেলার কৃষক ও গ্রামীণ জনগণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত দশদফা দাবির ভিত্তিতে জেলা কৃষি আধিকারিকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান-ধরনা সংগঠিত করেছে সারা ভারত কৃষক সভার করিমগঞ্জ জেলা কমিটি।
আজ মঙ্গলবার কৃষকরা মিছিল করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে জেলা কৃষি আধিকারিকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভে যোগ দিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদক কালিপদ নাথ বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে কৃষকদের। সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জাম, বিদ্যুতের দাম অনবরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা তাদের ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ঋণের ফাঁদে পড়ে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট স্বার্থে কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্যকরণ চাইছে। দেশি-বিদেশি বৃহৎ কর্পোরেটদের স্বার্থে সংসদকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে তিনটি চরম কৃষক স্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ণ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বছরব্যাপী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই আইনগুলি প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করেছিলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর আজও এমএসপি আইন হয়নি। অসম সরকারও যাবতীয় নীতি কৃষক স্বার্থের বিপরীতে যাচ্ছে। হাজার হাজার একর কৃষিজমি বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। চরম সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রণীত গো-সুরক্ষা আইনের ফলে গোপালক ও চাষিরা প্রয়োজনে গরু কেনাবেচা করতে পারছেন না। এই আইনের ফলে হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের কৃষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বনাঞ্চলে দীর্ঘদিন বসবাসকারী কৃষকদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। করিমগঞ্জ জেলায় এ বছর পর পর দুবার বন্যা ও বন্যা পরবর্তী খরায় খারিফ শস্য, রবিশস্য ও সবজি উৎপাদন ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিপূরণ নিয়ে ব্যপক দলবাজি, দুর্নীতি, ভোটের রাজনীতি চলছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজ্য সরকার ফসল কেনার কথা ঘোষণা করলেও বাস্তবে জেলায় একটিমাত্র ধান ক্রয়কেন্দ্র এবং ধান বিক্রয়ে বিভিন্ন জটিল শর্ত আরোপ করায় গত বছর কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারেননি। গ্রামীণ মহাজন, মধ্যসত্ত্বভোগী ও ফড়েরা এই ব্যবস্থার ফায়দা নিচ্ছে।
কালিপদ নাথ বলেন, জেলায় জলসেচের ব্যবস্থা না থাকায় খরায় মাঠে ফসল নষ্ট হয়েছে। বুলডজার দিয়ে বাড়িঘর ভেঙে করিমগঞ্জ জেলায় কৃষক উচ্ছেদ চলছে। গ্রামে হাহাকার।
আজকের অবস্থানস্থলে দাবি তোলা হয়েছে, গ্রামে এমজিএনরেগার কাজ চালু করে প্রত্যেক জবকার্ডধারীর ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে হবে। এনরেগার কাজে পুকুরচুরি, যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিক্ষোভ শেষে দশদফা দাবি সংবলিত স্মারকপত্র জেলা কৃষি আধিকারিক এবং জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। স্মারকপত্রে দশদফা দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েতে ধান বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে কৃষকদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ধান ক্রয় করতে হবে, সার, বীজ, কীটনাশকের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে, কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, কৃষিজমিতে সেচের ব্যবস্থা করে জলাধার, গভীর নলকূপ খনন করতে হবে, কৃষি উৎপাদন সামগ্রী কৃষকের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, সকল জবকার্ডধারীদের এনরেগায় ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে হবে। এনরেগার কাজে দুর্নীতি, যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গ্রামীণ রাস্তা, সেতু, স্লুইচ গেটগুলির বন্যা-পরবর্তী সংস্কার এখনই শুরু করতে হবে, কৃষিজমির ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ব্যাংক ঋণ ও খাজনা মকুব করতে হবে, নদী ভাঙন ও ভূমিস্খলন রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুনর্বাসন ছাড়া বনাঞ্চল ও সিলিং উদ্বৃত্ত জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘদিন বনাঞ্চল ও সিলিং উদ্বৃত্ত জমিতে বসবাসকারী কৃষকদের জমির পাট্টা দিতে হবে।
আজকের বিক্ষোভে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষক সভার করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি সোনাচান্দ সিনহা, প্রবীণ কৃষক নেতা কৃপেশ দাশগুপ্ত, করিমগঞ্জ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক কালিপদ রায়, বদরপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র দাস, পাথারকান্দি আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক প্রফুল্ল সিনহা প্রমুখ।

