ঢাকা, ২১ নভেম্বর (হি.স.) : অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে পাঁচদিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছে অসম বিধানসভার ৩৭ বিধায়কের প্রতিনিধি দল। ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বলবৎ হলে অসমে ফিরে যেতে বাংলাদেশে বসবাসকারী অসমিয়াদের আমন্ত্ৰণ জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের নেতা তথা অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি। ইতিমধ্যে গতকাল প্রতিনিধি দলের চার সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সৌজন্য বিনিময় করেছেন। সাক্ষাৎকালে তাঁরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য, সংযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন, জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে।
গত ১৯ নভেম্বর বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে পাঁচদিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছে ভারতের অসম বিধানসভার ৩৭ বিধায়কের প্রতিনিধি দল। অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিশেষ ভ্রমণসূচি নিয়ে ৩৭ জন বিধায়ক সহ দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এসেছেন। এর একটি হচ্ছে বিহু এবং অন্যটি বড়ো পরম্পরাগত বাগরুম্বা নৃত্যদল। প্রতিটি দলে রয়েছেন আটজন করে শিল্পী।
১৯ নভেম্বর সকাল নয়টায় আগরতলার আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছলে সেখানে অসম বিধানসভার প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলাশাসক মোহম্মদ শাহগির আলম। সেখান থেকে সকাল দশটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ঢাকায় তাঁদের স্বাগত জানান ডিজি। প্রতিনিধি দলটি পরিদর্শন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘর। ওইদিন বিকালবেলা বৈঠক সহ রাতে নৈশভোজের আয়োজন রয়েছে পার্বত্য খগড়াছড়ির সংসদ সদস্য এইচই কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার সঙ্গে। সেখানে তাঁরা বড়ো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় করে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
পাঁচদিবসীয় সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন তাঁরা। এতে অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সীমান্ত প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে চারজনের প্রতিনিধি দল প্ৰধানমন্ত্ৰী হাসিনাকে অসমে যাওয়ার জন্য আমন্ত্ৰণ জানিয়েছে। এই দলে ছিলেন অধ্যক্ষ বিশ্বজিতের (বিজেপি) সঙ্গে বিরোধী নেতা দেবব্ৰত শইকিয়া (কংগ্রেস), বিধায়ক হাফিজ বসির আহমেদ কাসিমি (এআইইউডিএফ) এবং রমেন্দ্ৰ নারায়ণ কলিতা (অগপ)। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এবং সদসদের অধ্যক্ষ শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন অসম বিধানসভার প্রতিনিধিরা। পরে তাঁরা বাংলাদেশের কয়েকটি শিল্প কারখানাও ঘুরে দেখেছেন।
আজ ২১ নভেম্বর প্রতিনিধি দল যাত্রা করেছে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সেখানে তাঁদের স্বাগত জানান গোপালগঞ্জের জেলাশাসক সাহিদা সুলতানা। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাঁরা এদিন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি ঘুরে দেখছেন।
আগামীকাল ২২ নভেম্বর নরসিংদিতে ‘প্রাণ’ কোম্পানির বিভিন্ন সামগ্রীর কারখানা ও প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখবেন বিধায়কের দল। এর পর প্রাণের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন তাঁরা।
এছাড়া বিধায়করা রাঙামাটির একটি অসমিয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গী অসমের সাংস্কৃতিক দল ঢাকায় কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি রাঙামাটিতে সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তাঁরা। সফর শেষ করে আগামী ২৩ নভেম্বর অসম বিধানসভার প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকে ফিরে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
অসম বিধানসভার ৩৭ জনের বিধায়ক দলের প্রধান অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি বাংলাদেশে বসবাসকারী অসমিয়াদের অসমে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আজ এখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বলবৎ হলে অসমে ফিরে যেতে বাংলাদেশে বসবাসকারী অসমিয়াদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। দৈমারি বলেন, বাংলাদেশে ৫০০-এর বেশি অসমিয়া পরিবার বসবাস করছে। বাংলাদেশের অসমবস্তি বলে খ্যাত গ্রামে আছেন অসমিয়া-বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে অসমিয়াদের ‘অসম’ বলে স্বীকৃতিও দিয়েছে। অধিকাংশ অসমিয়া বাংলাদেশে নিজেদের উপাধি ‘অসম’ বলে লেখেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সব প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধাও লাভ করছেন ওই সব অসমিয়ারা।
প্রসঙ্গত, সরকারি তালিকা অনুযায়ী অসম বিধানসভার প্রতিনিধি দলে রয়েছেন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি, গহপুরের বিধায়ক উৎপল বরা, বিজনির বিধায়ক অজয় রায়, রাতাবাড়ির বিধায়ক বিজয় মালাকার, লামডিঙের বিধায়ক শিবু মিশ্র, শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, মরিয়ণির বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি, সরুপথারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন, দমদমার বিধায়ক রূপেশ গোয়ালা, নাজিরার বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শই কিয়া, প্রাক্তনমন্ত্রী বর্তমান সামাগুড়ির বিধায়ক তথা উপ-বিরোধী দলনেতা রকিবুল হুসেন, দক্ষিণ শালমারার বিধায়ক ওয়াজেদ আলি চৌধুরী, অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, ছয়গাঁওয়ের বিধায়ক রেকিবুদ্দিন আহমেদ, মঙ্গলদৈয়ের বিধায়ক বসন্ত দাস, বটদ্রবার বিধায়ক শিবামণি বরা, পশ্চিম গোয়ালপাড়ার বিধায়ক আব্দুর রসিদ মণ্ডল, লাহরিঘাটের বিধায়ক ডা. আসিফ মহম্মদ নাজার, আমগুড়ির বিধায়ক প্রদীপ সরকার, বড়ক্ষেত্ৰির বিধায়ক দিগন্ত বর্মণ, জলেশ্বরের বিধায়ক আফতাব উদ্দিন মোল্লা, কাটিগড়ার বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বড়খলার বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর, পশ্চিম গুয়াহাটির বিধায়ক রমেন্দ্রনারায়ণ কলিতা, দেরগাঁওয়ের বিধায়ক ভবেন্দ্রনাথ ভরালি, সরভোগের বিধায়ক মনোরঞ্জন তালুকদার এবং তাঁর স্ত্রী স্বর্ণলতা তালুকদার, পশ্চিম বিলাসীপাড়ার হাফিজ বসির আহমেদ কাসিমি, ধিঙের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম, সোনাইয়ের বিধায়ক করিম উদ্দিন বড়ভুইয়াঁ, জনিয়ার বিধায়ক রফিকুল ইসলাম, কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর, জনিয়ার বিধায়ক আশ্রাফুল হুসেন, আলগাপুরের বিধায়ক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, ওদালগুড়ির বিধায়ক গোবিন্দ বসুমতারি, তামুলপুরের বিধায়ক জলেন দৈমারি, সিদলির বিধায়ক জয়ন্ত বসুমতারি এবং পূর্ব কোকরাঝাড়ের বিধায়ক লরেন্স ইসলারি। তাঁদের সঙ্গে আছেন অসম বিধানসভা সচিবালয়ের কয়েকজন আধিকারিকও।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিন। এখনও মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা সফর না হলেও শিলচর-সিলেট মৈত্রী উৎসব এবং অসম বিধানসভার ৩৭ বিধায়কের ঢাকা সফরের মাধ্যমে সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রতিনিধি দলের, উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা