মৃত্যুর কাছে পরাস্ত প্রখ্যাত অভিনেতা নিপন গোস্বামী, শোকার্ত সাংস্কৃতিক-জগত সহ গোটা অসম

গুয়াহাটি, ২৭ অক্টোবর (হি.স.) : অবশেষে হার মানলেন অসমিয়া চলচ্চিত্রের দাপুটে তারকা। মৃত্যুর কাছে পরাজিত হলেন প্রখ্যাত অভিনেতা নিপন গোস্বামী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা পনেরো (৯.১৫) মিনিটে গুয়াহাটির বেসরকারি নেমক্যায়ার হাসপাতালে কার্ডিও-অ্যাটাক হলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অসমিয়া রুপালি পর্দার ম্যাটিনি আইডল, হার্টথ্রব গোস্বামী। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

প্রথিতযশা অভিনেতার প্রয়াণে শোকাভিভূত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রী মোদী, রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল সহ রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়ক, সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। শোকমগ্ন গোটা সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্র জগত সহ গোটা অসম।
স্বাস্থ্যজনিত কারণে কয়েকদিন আগে জনপ্রিয় তারকাকে নেমক্যায়ার হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ৰমশ তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাঁকে আইসিএউ-তে ভরতি করা। কিন্তু চিকিৎসকদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে আজ সকাল সোয়া নয়টায় না ফেরার দেশে পাড়ি দেন শতাধিক সিনেমার নায়ক সুদর্শন নিপন গোস্বামী।
নিপন গোস্বামীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তেজপুরের কলিবাড়িতে হয়েছিল। তাঁর বাবা চন্দ্ৰধর গোস্বামীও একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ছিলেন। মা নিরুপমা গোস্বামী ছিলেন সংগীত জগতের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া তাঁর পাঁচ কাকাও অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শৈশবকাল থেকে কলা–সংস্কৃতি এবং অভিনয় জগতের একটি পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছিলেন নিপন।
কলিবাড়ি এলপি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি তেজপুর গভর্নমেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে চলে যান। পরবর্তীতে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাশ করে তিনি পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে সাক্ষাৎকারের জন্য কলকাতা চলে গিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে অভিনয় প্রশিক্ষণের জন্য পুনে যান নিপন। সেখানে সুভাষ ঘাই, নবীন নিশ্চল, শত্রুঘ্ন সিনহা প্রমুখ তাঁর সহপাঠী ছিলেন।
স্কুল জীবনেই প্রথমে তিনি অভিনয় করার সুযোগ লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে ফণী শর্মা পরিচালিত ‘পিয়ালী ফুকন’ ছায়াছবিতে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে অসমিয়া চলচ্চিত্র শিল্পে আত্মপ্রকাশ তাঁর। ‘সংগ্রাম’ ছায়াছবিতে মূল অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে হাজারো দর্শকের মন জয় করেন। এটা ছিল তাঁর প্রথম অসমিয়া এবং একটি হিট চলচ্চিত্র। ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর পরবর্তী সিনেমা ‘ডক্টর বেজবরুয়া’ তাঁকে পরবর্তী কালে বহু সিনেমায় অভিনয় করার জন্য একজন তারকা হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।
নিপন গোস্বামী অভিনীত ছায়াছবিগুলির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ককা দেউতার নাতি আরু হাতী’, ‘আজলি নবৌ’, ‘কাল সন্ধ্যা’, ‘শকুন্তলা’, ‘শংকর যোসেফ আলি’, ‘মরীচিকা’, ‘কাদম্বরী’, ‘তুমি আহিবানে’, ‘পলে পলে উড়ে মন’, ‘বান্ধৈ’, ‘সরু বোয়ারি’, ‘হিয়া দিয়া নিয়া’, ‘তুমি মোর মাথোঁ মোর’, ‘পুরব কী আওয়াজ’, ‘গানে কি আনে’, ‘শৈশবতে ধেমালিতে’, ‘সিরাজ’, ‘দেউতার বিয়া’, ‘প্রিয়া ও প্রিয়া’, ‘ককা দেউতার ঘর জোঁয়াই’, ‘অপরূপা’, ‘সন্ধ্যারাগ’, ‘বহাগর দুপরিয়া’, ‘ঘর সংসার’ প্রভৃতি শতাধিক ছবি। তাঁর অভিনীত শেষ অসমীয়া ছবি রজনী বর্মণের ‘লঙ্কাকাণ্ড’।
তিনি চরিত্র অভিনেতা হিসেবে কয়েকটি হিন্দি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন বলিউডের একচ্ছত্র অভিনেতা, মহানায়ক, বিগবস অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও। ল্পনা লাজমির ‘দামন’, ভবেন্দ্রনাথ শইকিয়ার ‘কাল সন্ধ্যা’ এবং রাজকুমার কোহলির ‘বিরোধি’ সহ সাতটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নিপন গোস্বামী।
মূলত চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও নিপন গোস্বামী ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার যেমন আবাহন, কোহিনূর, হেঙ্গুল এবং শকুন্তলার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ‘রিতু আহে রিতু জাই’-এর মতো কয়েকটি টিভি সিরিয়ালেও তিনি অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।
অসমের প্রথমসারির নাট্যগোষ্ঠী আবাহন থিয়েটার নিপন গোস্বামীকে ২০২১ সালে ড০ ভবেন্দ্ৰনাথ শইকিয়া পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল। এছাড়া অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *